টেক্সাসে হড়পা বানে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেল। শুক্রবার ভোরে বিপর্যয়ের পর থেকে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। পঞ্চম দিনে এসেও অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১০৪ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতদের মধ্যে শুধুমাত্র টেক্সাসের কের কাউন্টির বাসিন্দাই রয়েছেন ৮৪ জন। নিহতদের মধ্যে ২৮ শিশুও রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ২৪ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে গুয়াদালুপে নদীর ধারে ‘ক্যাম্প মিস্টিক’-এর ১১ জন রয়েছেন। এই ক্যাম্পটি সম্পূর্ণ ধুয়ে গিয়েছে হড়পা বানে। মঙ্গলবার এবং বুধবারও টেক্সাসের ওই অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বৃহস্পতি-শুক্রবারের আগে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যেই চলছে উদ্ধারকাজ। টেক্সাসের এই বিপর্যয়ের পরে স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই দাবি করছেন, তাঁদের মোবাইলে কোনও সতর্কবার্তা আসেনি। তা ছাড়া যে সময়ে হড়পা বানের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল, তখন প্রায় সকলেই ঘুমোচ্ছিলেন। ফলে পালানোর সময় পর্যন্ত পাননি অনেকে।
হড়পা বানে বিপর্যস্ত টেক্সাসে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: রয়টার্স।
বৃষ্টির মধ্যেও নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, প্রদেশের ২০টিরও বেশি সংস্থা এবং কয়েকশো স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কারও দেহ উদ্ধার না-হওয়া পর্যন্ত তাঁকে মৃত বলে ধরে নিতে চাইছেন না উদ্ধারকারীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যালিফর্নিয়া থেকেও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে টেক্সাসে।
আরও পড়ুন:
টেক্সাসের এই হড়পা বান মনে করিয়ে দিচ্ছে এক বছর আগে কেরলের ওয়েনাড়ের ভূমিধসের ঘটনাকেও। সেটিও ছিল জুলাই মাস। ভোরে যখন গোটা ওয়েনাড় ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনই হঠাৎ প্রবল শব্দে ওয়েনাড়ের দু’টি পাহাড়ি ঢালের মাঝখান দিয়ে নেমে আসে কাদামাটির স্রোত। সঙ্গে গাছ এবং বড় বড় পাথরের চাঁই। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পরে ওয়েনাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া গায়ত্রী নদীও জনপদের দিকে এগিয়ে আসে। ওয়েনাড়ের মতো টেক্সাসের এই অঞ্চলটিও পাহাড়ি ঢালের মধ্যে। তার মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে গুয়াদালুপে নদী। টেক্সাসেও গভীর রাতে গুয়াদালুপ নদীতে নামে হড়পা বান। ঘুমে আচ্ছন্ন থাকার কারণে কেউ টেরই পাননি বিপদ।
টেক্সাসে এখনও নিখোঁজ প্রায় ২৪ জন। ছবি: রয়টার্স।
টেক্সাসের এই নদীর ধার দিয়ে অনেকগুলি ‘সামার ক্যাম্প’ রয়েছে। তার মধ্যে দু’টি ক্যাম্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে— ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ এবং ‘ক্যাম্প লা জুন্টা’। এই দু’টি ক্যাম্পেরই বড় অংশ নদীর বন্যাপ্রবণ অববাহিকার মধ্যে পড়ে। ‘ক্যাম্প মিস্টিক’-এর অন্তত ১১ জনের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য ক্যাম্পটি থেকে অবশ্য কারও নিখোঁজ হওয়ার খবর নেই। গত শুক্রবারই ‘ক্যাম্প লা জুন্টা’র কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ক্যাম্পের সকলে সুরক্ষিত রয়েছেন।