বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এ বার নিজেদের অবস্থান জানাল সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ বলে ব্যাখ্যা করছে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। তাদের দাবি, বিষয়গুলি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা নিয়ে মন্তব্য অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সমান বলে দাবি ইউনূসের বিদেশ মন্ত্রকের।
গত সপ্তাহে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেন। ভারতের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের ক্ষেত্রে কোনও ভেদাভেদ না-করে প্রতিটি ঘটনায় বিশদ তদন্ত করুক বাংলাদেশের প্রশাসন। সে দেশে হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং হিংসার প্রতিটি ঘটনায় সব অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনা হোক। একই সঙ্গে কিছু ‘হিংস্র কট্টরপন্থী’র জেলমুক্তি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারেরই, তা-ও বলেন জয়সওয়াল।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মন্তব্যের এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানাল বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার ইউনূসের বিদেশ মন্ত্রক জানায়, দিল্লির সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’ এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করছে তারা। বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘বাসস’ অনুসারে, সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, এই বিষয়গুলি সম্পূর্ণরূপে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এই ধরনের মন্তব্য অযৌক্তিক ও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সমতুল্য।”
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথ ভাবে সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তরুণদের ওই নতুন দলের নাম দেওয়া হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বাংলাদেশের ওই নতুন দল নিয়েও গত সপ্তাহে প্রশ্ন করা হয়েছিল জয়সওয়ালকে। ওই সময়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ভারত সবসময় স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং আঞ্চলিক ভাবে অখণ্ড বাংলাদেশের পক্ষে, যেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে। তবে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লির উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে গুরুতর অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত কিছু ‘হিংসাত্মক কট্টরপন্থী’র মুক্তিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত যে কূটনৈতিক স্তরে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তা-ও স্পষ্ট করে দেন জয়সওয়াল।
আরও পড়ুন:
ইউনূস সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বৃহস্পতিবার পাল্টা জানান, প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে বাংলাদেশ সমর্থন করে। তিনি বলেন, “ঢাকা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, বাংলাদেশ আশা করে যে, ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”