Advertisement
E-Paper

ডোকালাম-জট বড় চিনা ছকের অংশ: নারায়ণন

শুক্রবার কলকাতায় ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে এক আলোচনাচক্রের অন্যতম বক্তা, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের মতে, একবিংশ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এশিয়াকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩২

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাল ঠোকাঠুকি আপাতত থামলেও ডোকালামে উত্তাপ এখনও যথেষ্টই। প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন জানাচ্ছেন, ডোকালাম নিয়ে চিনের দাবি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা আসলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতকে কোণঠাসা করার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশমাত্র।

শুক্রবার কলকাতায় ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে এক আলোচনাচক্রের অন্যতম বক্তা, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের মতে, একবিংশ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এশিয়াকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। সেখানে ভারত আর চিন দুই প্রধান শক্তি। সেই জন্যই দিল্লিকে কোণঠাসা করে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে বেজিং।

ভারত, ভুটান ও চিনের মধ্যবর্তী ডোকালাম নিয়ে বিরোধ বেধেছিল দিল্লি-বেজিংয়ের। ৭৩ দিন দু’‌দেশের সেনা দাঁড়িয়ে ছিল মুখোমুখি। চিনের দাবি, ডোকালাম তাদের এলাকা। সঙ্গত কারণেই সেই দাবির বিরোধিতায় সরব হয়েছিল ভারত। যুযুধান পরিস্থিতি স্তিমিত হলেও উত্তাপ রয়ে গিয়েছে ওই দাবি আর তার বিরোধিতাকে ঘিরেই। এই পরিস্থিতিতে ভারত-চিন দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছে ‘সেন্টার ফর ইস্ট অ্যান্ড নর্থ ইস্ট রিজিওনাল স্টাডিজ-কলকাতা’ (সেনার্স কে)। সেই অনুষ্ঠানেই প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানান, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে লাদাখ নিয়ে দাবি তুলেছিল চিন। সেই দাবিটা ক্রমে সরে এসেছে অরুণাচলের দিকে।

প্রাক্তন সেনাকর্তাদের অনেকেই বলেন, ভারত সম্পর্কে চিনের স্বচ্ছ ধারণা নেই। বরং স্বাধীনোত্তর কালে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ক্রমাগত প্রভাব বৃদ্ধির ব্যাপারটাকে চিন ভাল ভাবে নেয়নি। চিনের তরফে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগও করেছেন অনেক প্রাক্তন সেনাকর্তা। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জনরঞ্জন মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ভারতের গণতন্ত্র সম্পর্কে চিনের বিরূপ ধারণা রয়েছে। ভারত যে তিব্বতের স্বাধীনতার দাবি সমর্থন করছে, দলাই লামাকে আশ্রয় দিচ্ছে—সেই সব বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে আসছে চিন।

এই সব কারণে সীমান্ত-সমস্যা ছাড়াও চিন কূটনীতিগত ভাবে কী ভাবে ভারতকে চাপে ফেলতে চাইছে, এ দিন তা ব্যাখ্যা করেন নারায়ণন। তিনি বলেছেন, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ, নেপালের মতো ভারতের বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বেজিং। তাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশীদের দূরত্ব বা়ড়ছে। পাকিস্তানও চিনের এই বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশীদার।

এই আলোচনাচক্রে চিনের তরফে কোনও সরকারি প্রতিনিধি নেই। উদ্যোক্তারা জানিয়েছিলেন, সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক অধ্যাপক এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। কিন্তু গুয়ো শিতাং নামে সেই অধ্যাপক ভারতে আসার ভিসা পাননি। অনেকেই বলছেন, গত বছর বিজেপি-ঘনিষ্ঠ একটি নীতি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ওই চিনা অধ্যাপক। কিন্তু ডোকালাম-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাঁকে ভিসা দেওয়া হয়নি। ‘সেনার্স কে’-র কর্তাদের দাবি, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা নেই।

আলোচনাচক্রের উদ্যোক্তারা জানান, চিনের কোনও প্রতিনিধি না-থাকলেও এই আলোচনায় কয়েক জন বিদেশি কূটনীতিবিদ ও গবেষক রয়েছেন। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ভারত ও চিনের বিরোধ মেটানোর উপায় বাতলে পরামর্শপত্র পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।

M. K. Narayanan China India-China Doklam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy