মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ধনকুবের ইলন মাস্কের ‘বিচ্ছেদ’ নিয়ে চর্চা অব্যাহত। রোজই একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন তাঁরা। এক সময়ের গাঢ় বন্ধুত্ব এখন তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে কেউ ট্রাম্পের পক্ষে, কেউ আবার সমর্থন করছেন মাস্ককে! তবে মাস্কের বন্ধুবিচ্ছেদের ইতিহাস নতুন নয়। একসঙ্গে পথ চলা শুরু করা ব্যবসায়িক সঙ্গীদের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করেছেন মাস্ক!
মাস্ক বনাম স্যাম অল্টম্যান
মাস্কের সঙ্গে স্যাম অল্টম্যানের বন্ধুত্বের কথা অজানা নয়। চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা-সংস্থা ওপেনএআই তৈরিতে স্যামকে সহায়তা করেছিলেন টেসলা-কর্তা। টাকাও ঢেলেছিলেন। মাস্ক এবং অল্টম্যান— দু’জনেই ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৮ সালে সংস্থা থেকে সরে দাঁড়ান ইলন। অল্টম্যান থেকে যান। তাঁর হাত ধরেই আসে চ্যাটজিপিটি। ওপেনএআই প্রাথমিক ভাবে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসাবে চালু হলেও চ্যাটজিপিটির সাফল্যের পর ওপেনএআইকে একটি লাভজনক সংস্থায় পরিণত করার চেষ্টায় রয়েছেন অল্টম্যান। তবে মাস্কও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। প্রকাশ্যে ওপেনএআই এবং অল্টম্যানের নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনাও করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এমনকি, নিজস্ব কৃত্রিম মেধা সংস্থা ‘এক্সএআই’ চালু করেন মাস্ক। তা নিয়ে পাল্টা মামলা করে ওপেনএআই। এখানেই থেমে থাকেননি টেসলা-কর্তা। ৯৭৪০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ওপেনএআই কিনে নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি।
মাস্ক বনাম জ্যাক ডরসি
২০০৬ সালে চার বন্ধু মিলে টুইটার (অধুনা এক্স) খুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন জ্যাক ডরসি। এই মাইক্রোব্লগিং সাইটটির জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তবে ২০২২ সালে পালাবদল ঘটে টুইটারে। অধিগ্রহণ করেন মাস্ক। তবে এই অধিগ্রহণ খুব সহজ ছিল না। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। প্রথমে টুইটার কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে চুক্তি করেছিলেন মাস্ক। পরে আবার নিজেই সরে দাঁড়ান। তবে শেষপর্যন্ত টুইটার কিনে নেন টেসলা-কর্তা। অধিগ্রহণের পরই টুইটারে গণছাঁটাই শুরু করেন মাস্ক। তিনি ঘোষণা করেন, নতুন করে টুইটারকে সাজাবেন। শুধু টুইটারের অন্দরে নয়, গ্রাহকদের জন্যও বড় পরিবর্তন আনার ঘোষণা করেন মাস্ক। তাঁর এই সব সিদ্ধান্তে খুশি হননি ডরসি। গণছাঁটাইয়ের বিরোধিতা করে ‘ক্ষমা’ চেয়ে নেন তিনি। জানান, টুইটারের জন্য মাস্ক উপযুক্ত ব্যক্তি নন।
মাস্ক বনাম মার্টিন এবারহার্ড
মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টারপেনিং ২০০৩ সালে টেসলা নামে একটি কোম্পানি শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁরাই এই কোম্পানির সঙ্গে মাস্ক এবং আরও দুই কর্মীকে টেসলার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে স্বীকৃতি দেন। বৈদ্যুতিন যানবাহন তৈরির সংস্থায় প্রথম বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিলেন মাস্ক। ২০০৪ সালে টেসলার চেয়ারম্যান হন তিনি। সেই সময় এবারহার্ড ছিলেন টেসলার সিইও। কিন্তু ২০০৭ সালে মাস্কের নেতৃত্বাধীন বোর্ড এবারহার্ডকেই পদত্যাগ করতে বাধ্য করে! ২০০৮ সালে কোম্পানি ছেড়ে চলে যান এবারহার্ড। তবে মাস্কের বিরুদ্ধে মানহানি এবং চুক্তিভঙ্গের অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু মামলা হেরে যান এবারহার্ড।
আরও পড়ুন:
মাস্ক বনাম পিটার থিয়েল
২০০০ সালে ‘পেপ্যাল’ নামে একটি ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’ সংস্থা তৈরি করেছিলেন মাস্ক। ‘কনফিনিটি’ নামক একটি সফ্টওয়্যার কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ‘পেপ্যাল’-এর যাত্র শুরু। তবে মাস্কের দাবি, তাঁর সহযোগী এবং ‘পেপ্যাল’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েল ষড়যন্ত্র করে তাঁকে সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেন। তবে থিয়েলের দাবি, মাস্কের উচ্চাঙ্ক্ষা কোম্পানির ক্ষতি করছিল! তবে এই দ্বন্দ্বের মধ্যেও থিয়েল মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সে বিনিয়োগ করে। পরে মাস্ক-থিয়েল সম্পর্ক কিছুটা উন্নতি হয়।
মাস্ক বনাম রিচার্ড সরকিন
৯০-এর দশকে মাস্ক তঁর ভাই এবং বন্ধুর সঙ্গে মিলে অনলাইন সিটি গাইড ‘জ়িপ২’ শুরু করেন। তবে পরবর্তীতে রিচার্ড সরকিন নামে এক ব্যক্তি ওই সংস্থার সিইও হিসাবে নিযুক্ত হন। তার পর থেকেই মাস্কের সঙ্গে নানা কারণে বিরোধ শুরু হয়। সেই বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে ১৯৯৯ সালে কোম্পানি বিক্রি করে দিতে হয়।