গত মাসের শেষে তাইল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল। নতুন রাজার অভিষেকের পরে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এরই মধ্যে কোন রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে এবং বিরোধী দলে কারা থাকবে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আমার এই ২৯ বছর বয়সেই তাইল্যান্ডে দু’বার সামরিক শাসন দেখেছি। যখন ১৮ বছর বয়সে প্রথম সামরিক শাসন দেখি, তখন বিষয়টি ‘ভাল’ বলেই ধরে নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, যে-রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তাইল্যান্ড, সেখান থেকে মুক্তি দিতে পারবে সেনাবাহিনী।
তবে গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এবং সাংবাদিকতার জগতে ঘোরাফেরার অভিজ্ঞতা আমায় পৃথিবীটাকে অন্য ভাবে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন বুঝতে পারি, কেন সাধারণ মানুষ সামরিক শাসন পছন্দ করেন না এবং কেন তাঁরা সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেন।
তবে বর্তমান সেনা সরকার প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ও-চা-র নেতৃত্বে তাইল্যান্ডের জনগণকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই আশা নিয়েই এ বার দলে দলে মানুষ ভোট দিয়েছেন গত ২৪ মার্চ।
এ বারের নির্বাচনের সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা। আমরা সবাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি এবং যে ফল এসেছে সেটি মেনেও নিয়েছি। কারণ, সকলের পছন্দের প্রার্থী তো জয়ী হবেন না, আর সেটা মেনে নেওয়াটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।
এ বার একটি বিষয় আমাদের অনেককেই খুব নাড়া দিয়েছে। নির্বাচনে বিভিন্ন দলের সদস্য হিসেবে যে বিশাল সংখ্যক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং সমকামীরা অংশ নিয়েছেন, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে ছিলেন মহাচোন পার্টির রূপান্তরকামী পলিন নার্মপ্রিন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। ভারতেও শুনেছি এ বার বেশ কয়েক জন রূপান্তরকামী প্রার্থী ভোটে লড়ছেন। তাঁরা যদি জেতেন, আশা করা যায় যে, সমকামী এবং তৃতীর লিঙ্গের মানুষদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাঁরা সরাসরি সংসদে আলোচনার সুযোগ পাবেন।
আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে সবাই নিজেদের মতবাদ তুলে ধরতে পারবেন। নিজেদের স্বপ্ন ও হতাশার কথা বলতে পারবেন। সকলের মতামতকে তুলে ধরার অন্য নামই তো গণতন্ত্র!
লেখক সাংবাদিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy