Advertisement
E-Paper

অভিবাসী আটকাতে গিয়ে বাস্তুতন্ত্রকেই সঙ্কটে ফেলছে ট্রাম্পের ‘মেক্সিকো দেওয়াল’!

ডান মিলিস কোনও দিন সেই দিনটার কথা ভুলতে পারবেন না। অ্যারিজোনার সান পেদ্রো রিপারিয়ান ন্যাশনাল কনজার্ভেশন এরিয়া-য় আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর রয়েছে উঁচু বেড়া। একটি হরিণ পরিবার দাঁড়িয়ে ছিল মেক্সিকো সীমান্তের দিকে। দুই সন্তানকে নিয়ে ওপারে যাবার জন্য ফাঁক ফোকর খুঁজছে মা হরিণ।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৫:৩১
আমরাও কি অভিবাসী?

আমরাও কি অভিবাসী?

ডান মিলিস কোনও দিন সেই দিনটার কথা ভুলতে পারবেন না। অ্যারিজোনার সান পেদ্রো রিপারিয়ান ন্যাশনাল কনজার্ভেশন এরিয়া-য় আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর রয়েছে উঁচু বেড়া। একটি হরিণ পরিবার দাঁড়িয়ে ছিল মেক্সিকো সীমান্তের দিকে। দুই সন্তানকে নিয়ে ওপারে যাবার জন্য ফাঁক ফোকর খুঁজছে মা হরিণ। বেড়ার গা ঘেঁষে তারা এগিয়ে চলল। যদি কোনও ফাঁকা জায়গা খুঁজে পায়। ওপারে যেতে পারলেই সবুজ ক্ষেত। সন্তানদের জন্য অন্তত খাবারের অভাব হবে না ওখানে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোনও ফাঁক খুজে পেল না তারা। মনের দুঃখে ফিরতে হল তাদের। সিকার নামে একটি ওয়েবসাইটে তাঁর এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন বর্ডারল্যান্ড নামে পরিবেশ সচেনতা সংস্থার ডিরেক্টর ডান।

হোয়াইট হাউসের মসনদে বসার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে তা যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে তিনি মরিয়া। তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তৈরি। মসনদে বসেই কাল বিলম্ব না করে শক্তপোক্ত দেওয়াল নির্মাণের আদেশ দিয়ে দিলেন ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়াল তৈরির ঘোষণার পরে শুধু মেক্সিকানরা নন, গোটা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যে প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত

যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যে প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে মেক্সিকোর ছয়টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের চারটি প্রদেশ জুড়ে ১১০০ কিলোমিটার বেড়া রয়েছে। প্রতি দিন এই সীমান্ত দিয়ে দিনের আলোতেই পাচার হয় মাদক-সহ নান নিষিদ্ধ জিনিস। উপরে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু কাঁটা তারের বেড়া, কোথাও আবার স্টিলের পাত দিয়ে ঘেরা রয়েছে। তা হলে কী ভাবে হয় পাচার? হোয়াইট হাউসের দাবি, একাধিক সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে করে পারাপার করে লক্ষাধিক মানুষ। প্রতি বছর এই সীমান্ত দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ বেআইনি ভাবে মার্কিন মুলুকে পা রাখেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে, দুর্নীতি এবং পাচার ঠেকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন কড়া পদক্ষেপে শুধু যে বেআইনি শরণার্থীরা সমস্যায় পড়বে তা নয়, সেখানকার বাস্তুতন্ত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। এই সীমান্ত বরাবর রয়েছে মরুভূমি, ধূ ধূ প্রান্তর থেকে সুবিশাল জলাশয়। যদি সীমান্ত বারবার ‘চিনের প্রাচীরে’র মতো উঁচু দেওয়াল তৈরি হয়ে যায়, তা হলে সেখানকার মানুষ এবং জীবজন্তুর আমুল পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

ওপারে যাওয়ার অনুমতি নেই ব্যাঙেরও। ছবি- সিকার (ড্যান মিলিস)

সীমান্ত লাগোয়া অ্যারিজোনার এক পশু খামারের মালিক জানাচ্ছেন, এক সময় এই সব জায়গায় অবাধ বিচরণ ছিল হরিণের। কিন্তু এখানে বেড়া হয়ে যাওয়ার পর সে ভাবে হরিণের দেখা মেলে না। শুধু হরিণ নয় শিয়াল, খরগোশ, আমেরিকান রেকুন জাতীয় পশুদেরও অস্তিত্ব সঙ্কটে। ১৯৯০-র গোড়া দিকে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে চোরাচালান এবং অভিবাসীদের আটকাতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। নজরদারির চালাতে এই সব এলাকায় লাইটিং প্রোজেক্ট, মোটর এবং হেলিকপ্টর দিয়ে টহলদারি শুরু হয়। মানুষের চলাচল যতই বেড়েছে এখানকার বন্য পশুদের আধিক্য ততই কমেছে বলে জানিয়েছেন ডিফেন্ডার্স অব ওয়াইল্ড লাইফের সাউথ ওয়েস্ট প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ব্রায়ান বার্ড।

মেক্সিকোর সোনোরা এবং আমেরিকার অ্যারিজোনা সীমান্তে থাকা অভয়ারণ্য

আইইউসিএন রেড লিস্ট অনুযায়ী জাগুয়ার প্রায় বিরল হতে চলেছে আমেরিকায় দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায়। ১৯০০ সালের মাঝামাঝি থেকে শিকার এবং নির্বিচারে জঙ্গল কেটে ফেলায় তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। একই সঙ্গে কমছে ধূসর শিয়ালের সংখ্যা। ২০১১ সালে একটি রিপোর্ট বলছে, আমেরিকা সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে সরে গিয়েছে ধূসর রঙের শিয়ালের বেশির ভাগ প্রজাতি। বর্তমানে সীমান্তের উত্তর দিকে ১০০টি এবং দক্ষিণ দিকে মাত্র ৩৫টি শিয়াল রয়েছে বলে দাবি আইইউসিএন রেড লিস্টের।

পাহাড়ি সিংহ। ছবি- মার্কিন সীমান্ত রক্ষী

মেক্সিকোর সোনোরা এবং আমেরিকার অ্যারিজোনা সীমান্ত মরু এলাকায় এক ধরনের পিগমি পেঁচা দেখা যায়। আকারে ছোট। মাটি থেকে মাত্র পাঁচ ফুট উঁচুতে উড়তে পারে এই পেঁচা। সীমান্তর বেড়াতে মাঝে মধ্যেই আটকে মারা যায় তারা। পরিবেশবিদ ব্রায়ান বার্ড জানাচ্ছেন, সীমান্ত বরাবর দীর্ঘ এই বেড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মরুভূমিতে থাকা কচ্ছপ, মিউল হরিণ, কালো হরিণ, আমেরিকান বাইসন, বনবিড়াল, ওকেলটের মতো বিরল প্রজাতিরা।

বেড়ার ফাঁকে এভাবে আটকে মারা যায় বহু পাখি। ছবি-সিকার (ড্যান মিলিস)

দুই দেশের সীমান্তে ১১০০ কিলোমিটার বেড়াজাল ইতিমধ্যে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের আমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। এ বার ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পাঁচিল অবশিষ্ট বাস্তুতন্ত্রকে সপাটে উত্খাত করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

আরও পড়ুন- ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে এবার সরব অ্যাঞ্জোলিনা

Donald Trump America Mexico US-Mexico Border Mexico Wall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy