অস্ট্রেলিয়ার প্রথম এবং একমাত্র হিজাব পরিহিতা সেনেটর তিনি। আফগান মুসলিম এই কন্যা অস্ট্রেলিয়ার আইনসভার কনিষ্ঠতম সদস্যও। সেই ফতিমা পেম্যানের অভিযোগ, তাঁকে হেনস্থা করেছেন আইনসভার এক ‘সিনিয়র’ সদস্য। শুধু তা-ই নয়, তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন ওই সেনেটর। ফতিমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে আইনসভার বিশেষ কমিটি।
ফতিমার অভিযোগ, এক পুরুষ সেনেটর তাঁকে মদ্যপানের জন্য জোরাজুরি করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, মদ্যপান করে তাঁকে নাচতে বলা হয়। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নির্দল সেনেটর ফতিমা বলেন, ‘‘আমার ওই সহকর্মী তখন আকণ্ঠ পান করেছিলেন। উনি আমাকেও মদ্যপান করতে জোর করেন।’’ ৩০ বছরের ফতিমার কথায়, ‘‘ওই সেনেটর আমায় ডেকে বলেন, ‘‘এসো আমার সঙ্গে একটু ওয়াইন পান করো।’’ তার পর দূরের টেবিল দেখিয়ে বলেন, ‘‘তোমায় ওটার উপরে দাঁড়িয়ে নাচতে দেখতে চাই আমি।’’ আফগান মুসলিম সেনেটর জানান, তিনি সহকর্মীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সহকর্মীর প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে তাঁকে ‘সাবধান’ও করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওকে বললাম, ‘আপনি সীমা অতিক্রম করছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে এগোব। কিন্তু উনি পাত্তা দেননি।’ এখন আমি ওঁর বিরুদ্ধে আইনসভায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’’
ফতিমার অভিযোগ, ওই পুরুষ সহকর্মী কেবল তাঁকে যৌনগন্ধী কথা বলেননি, তাঁর ধর্মীয় অনুভূতিতে জেনেবুঝে আঘাত করেছেন। ওই সহকর্মী জানতেন, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে তিনি হিজাব পরেন। মদ স্পর্শ করেন না। তা সত্ত্বেও ওই সেনেটর তাঁর সঙ্গে এই ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সেনেটর বলেন, ‘‘আমি মনে করি , আমার সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে কটাক্ষ করেছেন উনি।’’
ইতিমধ্যে ফতিমার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পার্লামেন্টরি ওয়ার্কপ্লেস সাপোর্ট সার্ভিস বা পিডব্লুউএসএস। পার্লামেন্টে যৌন হেনস্থা, শারীরিক বা মানসিক নিগ্রহের অভিযোগের তদন্ত করে থাকে ওই কমিটি। সেনেটর ফতিমা বলেন, ‘‘পিডব্লিউএসএস অভিযোগ গ্রহণ করেছে। আমার বিশ্বাস, তারা কার্যকরী পদক্ষেপ করবে।’’
আরও পড়ুন:
২০২২ সালে লেবার পার্টির প্রতিনিধি হিসাবে সেনটর হন ফতিমা। তবে গাজ়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে দলত্যাগ করেন তিনি। তার পর থেকে তিনি নির্দল সেনেটর। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে বিভিন্ন সংশোধনী আনতে সোচ্চার এই আফগান কন্যা। বিশেষ করে পার্লামেন্টের ভিতরে মহিলা সদস্যদের প্রতি আচরণ নিয়ে তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন। ২০২২ সালে যাঁকে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় মুসলিম রোল মডেল বলে আখ্যা দেয়, সেই মহিলারই অভিযোগ, তাঁর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। আর অভিযুক্ত একজন সেনেটর!