Advertisement
E-Paper

খেলনা-লজেন্সে শিশুদের কাছে টানল জার্মানি

অবশেষে কাটল পথের জট। দীর্ঘ অপেক্ষা আর লম্বা যাত্রাপথ পেরিয়ে শনিবার জার্মানির মিউনিখে এসে পৌঁছয় শরণার্থীদের প্রথম ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে পা রাখার কয়েক মুহূর্তেই কেটে গেল ‘বহিরাগত’ হওয়ার অস্বস্তিও।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৯
হাতের চকোলেট হাসি ফেরাল দু’ভাইয়ের মুখে।

হাতের চকোলেট হাসি ফেরাল দু’ভাইয়ের মুখে।

অবশেষে কাটল পথের জট। দীর্ঘ অপেক্ষা আর লম্বা যাত্রাপথ পেরিয়ে শনিবার জার্মানির মিউনিখে এসে পৌঁছয় শরণার্থীদের প্রথম ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে পা রাখার কয়েক মুহূর্তেই কেটে গেল ‘বহিরাগত’ হওয়ার অস্বস্তিও। স্টেশনে বড় বড় প্ল্যাকার্ডে অভ্যর্থনার বার্তা হাসি ফোটাল ভিটে মাটি ছেড়ে আসা শরণার্থীদের মুখে!

ট্রেন থেকে নামতেই জার্মান সরকারের উষ্ণ অভ্যর্থনায় কেঁদেও ফেললেন কেউ কেউ। ঢালাও পানীয় জল, খাবার-দাবার তো বটেই স্টেশনে ছিল চিকিৎসকদের বিশেষ দলও। পুলিশ আর স্বেচ্ছাসেবকেরা এগিয়ে এসে বাচ্চাদের হাতে তুলে দিলেন মুঠোভর্তি লজেন্স। এগিয়ে দিলেন খেলনা, সফ্‌টটয়। না-খাওয়া, না-ঘুমনো মুখে অবশেষে ফিরল হাসি। বাবা-মায়ের হাত ছেড়ে স্টেশন জুড়ে শুরু হল খেলনা নিয়ে দস্যিপনা!

স্টেশনে উপস্থিত বিশাল পুলিশ বাহিনী দিনভর ভিড় সামলেছেন হাসিমুখে। স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাস পর্যন্ত পৌঁছেও দিয়েছেন অতিথিদের। পুলিশ জানিয়েছে, স্টেশনেই নাম-পরিচয়ের সাময়িক কাগজপত্র তৈরি করে ওই শরণার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়। বিভিন্ন হোটেল, সেনা ছাউনি, সরকারি ভবনে আপাতত থাকার বন্দোবস্তও করা হয়েছে। জার্মানির প্রশাসন জানিয়েছে, শুধু শনিবারই প্রায় সাড়ে আট হাজার শরণার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে পৌঁছেছেন জার্মানিতে। শুধু মিউনিখ স্টেশনেই এসেছেন সাত হাজার মানুষ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত অস্ট্রিয়া এবং বুদাপেস্ট থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য রাতারাতি বিভিন্ন স্টেশনে নতুন জামাকাপড়, জুতো, খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ব্যবস্থা করা হয় দোভাষীরও। পুলিশের সঙ্গে অতিথি অভ্যর্থনায় হাত মিলিয়েছেন আমজনতাও। পুলিশি ব্যারিকেডের বাইরে দিনভর ভিড় করেছেন সাধারণ মানুষ। হাততালি আর স্লোগান দিয়ে শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরাও। কেউ বানিয়ে নিয়ে এসেছেন ‘জার্মানিতে স্বাগত’ লেখা ফ্লেক্স, কেউ আবার মোবাইলের ক্যামেরায় একের পর এক ছবি তুলেছেন।

প্ল্যাকার্ড, হোর্ডিং, ব্যানারে শরণার্থীদের স্বাগত-বার্তা।

সিরিয়া থেকে আসা ৩২ বছরের মহম্মদ বললেন, ‘‘এই প্রথম আমাদের কেউ মানুষ বলে গণ্য করল। আমার দেশেও এমন হয় না।’’ জার্মানির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি লারা সাবাগ জানালেন, দোভাষীর কাজ করতে সকাল থেকেই স্টেশনে রয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা সকলে খুব ভয় পেয়ে রয়েছেন। ছবি তুলতে চাইছেন না। ওঁদের দেশ ছাড়ার খবর জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।’’ লারা আরও জানান, জার্মানি যে এ ভাবে আপন করে নেবে, ভাবতেও পারেননি শরণার্থীরা। এত লোকজন, এত উদ্‌যাপন দেখে ভয় পাচ্ছেন। বার বার প্রশ্ন করছেন, এ সব কেন হচ্ছে!

শরণার্থী সমস্যা যখন বিশ্ব জুড়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তখন জার্মানির এই অভ্যর্থনা নজির তৈরি করল বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। জার্মানিকে দেখে এর পর ইউরোপ এবং তার বাইরের বিভিন্ন দেশও শরণার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে বলে মনে করছেন তাঁরা। শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আজ মুখ খুলেছেন পোপ ফ্রান্সিস। ইউরোপের ক্যাথলিক চার্চ এবং যাজকদের কাছে তাঁর আর্জি, অন্তত একটা করে উদ্বাস্তু পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক সেখানে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট আজ জানিয়েছেন, সমস্যার কথা মাথায় রেখে এ বছর তুলনামূলক ভাবে বেশি সংখ্যক সিরীয় উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেবে অস্ট্রেলিয়া। সাময়িক ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শরণার্থী-প্রকল্পে সামিল হতে না চাইলেও অন্ততপক্ষে ১৫ হাজার শরণার্থীকে জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটেনও।

জার্মানিকে ধন্যবাদ আপ্লুত যুবকের। ডর্টমুন্ড স্টেশনে।

বুদাপেস্ট থেকে অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে শরণার্থীরা পৌঁছলেও এখনও গ্রিস এবং ইতালিতে আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। গ্রিসের লেসবোস দ্বীপে পুলিশের সঙ্গে শরণার্থীদের খণ্ডযুদ্ধে একটি দু’মাসের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজই ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর ১১৪ জন সিরীয় উদ্বাস্তুকে উদ্ধার করে সাইপ্রাসে নিয়ে আসা হয়েছে বলেও খবর। জার্মানি-অস্ট্রিয়া-বুদাপেস্টে মেঘ কাটলেও সার্বিক ভাবে শরণার্থী-সঙ্কট এখনও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাষ্ট্রনেতাদের।

তুরস্কের সৈকতে সিরিয়ার আয়লানের নিথর দেহের ছবি, একের পর এক নৌকাডুবি, মৃত্যুর খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। তবে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, সার্বিক ভাবে ইউরোপ শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও আমেরিকা এখনও চুপ কেন? ভূমধ্যসাগরে মার্কিন নৌসেনার সিক্সথ-ফ্লিটের উপস্থিতি সত্ত্বেও কেন এড়ানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা? প্রশ্ন উঠছে সৌদি আরব, ইরান বা মিশরের মতো দেশগুলোর ভূমিকা নিয়েও।

ছবি: রয়টার্স।

syrian refugee greece police germany greets warmly greeted germany syria refugee abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy