প্রতীকী ছবি।
সালটা ১৯৬৫। যুদ্ধ বেঁধেছে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। যুযুধান দুই পড়শির মধ্যে শুরু হওয়া অশান্তি চিন্তার ছায়া ফেলে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলে। কিন্তু সবচেয়ে চওড়া ভাঁজটি পড়েছিল ব্রিটেনের কপালে। কারণ, তাড়াতাড়ি এই যুদ্ধ না-থামলে সে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়তে সময় লাগত না!
তবে এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শান্তি স্থাপন হয় সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই। যে খবরে, এই দুই দেশের মানুষের পাশাপাশি, সবার আগে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল ব্রিটেনের প্রশাসন। কিন্তু কেন? ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক পুরনো নথিতেই পাওয়া যায় তার ব্যাখা। যেখানে স্পষ্ট লেখা, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তানের যুদ্ধ না-থামলে ব্রিটিশ হাসপাতালগুলি থেকে দলে দলে চিকিৎসকদের তাঁদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি সেটাই হয়, তা হলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ‘ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস)’ নামক ব্যবস্থার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিটেনের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়বে ধাপে ধাপে।’’
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা এনএইচএস-এর সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের যোগ— এই নিয়েই তৈরি ‘আওয়ার এনএইচএস: আ হিডেন হিস্ট্রি’। এশীয় এবং বিশেষত ভারত আর পাকিস্তান থেকে আসা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর কতটা নির্ভরশীল ছিল তৎকালীন ব্রিটেনের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, তার উপরেই আলোকপাত করছে একটি ব্রিটিশ চ্যানেলের এই নয়া তথ্যচিত্রটি।
যুদ্ধ-পরবর্তী ব্রিটেনে সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করতে ১৯৪৮ সালের ৫ জুলাই তৈরি হয়েছিল এনএইচএস। তবে দলে দলে ব্রিটিশ চিকিৎসকেরা তখন পাড়ি দিচ্ছেন আমেরিকায়। রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার উপায় হাতড়াচ্ছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। শেষমেশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত এবং পাকিস্তানে ব্রিটিশদের তৈরি মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে পাশ করা চিকিৎসকদের ডাক পড়ে।
তথ্যচিত্রে তুলে ধরা এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সে সময়ে নটিংহ্যাম অঞ্চলে যে ১২৮ জুনিয়র ডাক্তার ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৫৫ জন ভারতীয় বা পাকিস্তানি। শেফিল্ড এবং ইর্য়কশায়ারে ১৭৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে এই দু’দেশ থেকে আসা চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ৮০। আর লিঙ্কনে ৬৬ জন জুনিয়র চিকিৎসকের মধ্যে ৫৫ জনই এসেছিলেন ভারত বা পাকিস্তান থেকে!
রোগীদের চোখে ‘ঈশ্বর তূল্য’ হলেও বার বার বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আসা চিকিৎসকদের। তবু ব্রিটেনের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরাই। এ দেশে তাঁদের গুরুত্ব যে কতখানি, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই অতিমারি। এখন ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান চিকিৎসক এক জন ভারতীয়ই— চন্দ নাগপাল। এই কঠিন সময়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে পথ দেখিয়েছে তাঁর তৈরি নানা নীতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy