আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর যে সব প্রাক্তন ও বর্তমান অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে রেখেছে সেনা। এই ঘটনার পরেই বাংলাদেশের প্রাক্তন এবং বর্তমান সেনা অফিসারদের মধ্যে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তাঁদের একাংশের মতে, এই ট্রাইব্যুনাল অবৈধ ও অসাংবিধানিক। সেনাবাহিনীর একটি অংশ মনে করছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে অতীতের বিভিন্ন কাজের জন্য সরাসরি সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে সং গঠিত বলপূর্বক গুমের অভিযোগে প্রায় দু’ডজন সামরিক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান দিন দুয়েক আগে বলেছিলেন, ‘‘সামরিক অফিসারদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলি আমাদের উপরপ্রভাব ফেলছে।’’
সেনার হেফাজতে থাকা অফিসারদের আগামী ২২ অক্টোবর আইসিটি-র সামনে হাজির করানো হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার জানিয়েছে, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪১(১) এর ক্ষমতাবলে এবং দ্য প্রিজন আইনের ধারা অনুসারে, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িক ভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হল।
যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইসিটি গঠন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক বলে দাবি বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনা অফিসারদের একাংশের। তাঁদের যুক্তি, সংবিধান অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি যে অধ্যাদেশ দ্বারাসংশোধন করা হয়েছে, তা সংসদে অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত বৈধ ও সাংবিধানিক নয়। সংবিধানের ৯৩(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও অধ্যাদেশ পূর্ণাঙ্গ আইন নয়।অতএব, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ও তার বিচার কার্যক্রম অবৈধ ও অসাংবিধানিক। এক প্রাক্তন সেনা অফিসারের কথায়, ‘‘বর্তমানে সেনাবাহিনীর অফিসারদের বিরুদ্ধে শিবিরপন্থী জঙ্গি তাজুলকে(তাজুল ইসলাম, চিফ প্রসিকিউটর, আইসিটি) দিয়ে যে চার্জ গঠন ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ ও সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অসাংবিধানিক।’’ ওই অফিসারের মতে, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে দুর্বল ও বিভক্ত করার উদ্দেশ্যেই এই ‘অবৈধ’ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আর এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারের বক্তব্য, ‘‘গোটা পরিকল্পনাটাই ইসলামপন্থী একটি সংগঠনের। তার চায়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে নতুন বাহিনী গঠন করতে। যা একটি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা।’’
সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, সেনা অফিসারদের একটি অংশ বক্তব্য, শুধু আওয়ামী লীগের আমলে সেনাবাহিনী অত্যাচার করেছে এমন তো নয়। বাংলাদেশে সেনা নির্যাতনের বহু অভিযোগ রয়েছে। এই ট্রাইব্যুনাল যে পথ দেখাচ্ছে, তাতে আগামী দিন পুরনো ঘটনার জের টেনে বহু সেনা অফিসারকেই কাঠগড়ায় তোলাহতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)