Advertisement
E-Paper

ভয়াল স্মৃতিটা ভুলতে চান উত্তর কোরিয়ার মহিলা ঘাতক-চর

কাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু শীতকালীন অলিম্পিক্স। এ বারের মতোই দক্ষিণ কোরিয়া আয়োজক দেশ ছিল তিরিশ বছর আগেও। উত্তর কোরিয়ার মহিলা গুপ্তচর হিসেবে সে বারই সেই ভয়ানক কাণ্ডটা ঘটিয়েছিলেন কিম হিওন-হুই। যাতে ১১৫ জনের প্রাণ গিয়েছিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০১
যুদ্ধ ভুলে: অলিম্পিক্সের প্রাক্কালে পড়শি দেশের মাটিতে উত্তর কোরিয়ার অর্কেস্ট্রা দল। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার গাংনিউং-এ। ছবি: রয়টার্স।

যুদ্ধ ভুলে: অলিম্পিক্সের প্রাক্কালে পড়শি দেশের মাটিতে উত্তর কোরিয়ার অর্কেস্ট্রা দল। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার গাংনিউং-এ। ছবি: রয়টার্স।

অলিম্পিক্সের রিং-গুলো দেখে তিরিশ বছর আগেকার ভয়ঙ্কর স্মৃতি ফিরে আসে তাঁর মনে।

কাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু শীতকালীন অলিম্পিক্স। এ বারের মতোই দক্ষিণ কোরিয়া আয়োজক দেশ ছিল তিরিশ বছর আগেও। উত্তর কোরিয়ার মহিলা গুপ্তচর হিসেবে সে বারই সেই ভয়ানক কাণ্ডটা ঘটিয়েছিলেন কিম হিওন-হুই। যাতে ১১৫ জনের প্রাণ গিয়েছিল।

১৯৮৮ সালে সোলে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্স ভেস্তে দেওয়ার জন্যই মাঠে নেমেছিলেন এই কিম। সরকারি নির্দেশে টাইমারে বোমা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার যাত্রিবাহী বিমানে ওঠেন তিনি। সেখানে একটা বিন-এর মধ্যে বোমা রেখে বেরিয়ে যান। উড়ে যায় বিমান। দক্ষিণ কোরিয়ার তদন্তে ধরা পড়েন কিম। সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে তাঁকে উত্তর কোরিয়া থেকে নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। এত বড় অপরাধ সত্ত্বেও তাঁকে ক্ষমা করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া।

এর পরেই জীবনটা পাল্টে যায় কিমের। কোরীয় উপদ্বীপের দুই দেশ যে একে অন্যের চেয়ে কতখানি আলাদা, নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছেন এই একদা গুপ্তচর। যিনি এখন শুধু এক গৃহবধূ। টিভিতে ২০১৮-র অলিম্পিক্স দেখবেন বলে অপেক্ষা করছেন। বললেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ায় কিম ইল সাঙের হাতে রোবটের জীবন কাটিয়েছি। দক্ষিণ কোরিয়ায় এসে নতুন জীবন পেয়েছি।’’

নতুন জীবনে কিম আর তিক্ত অতীত মনে করতে চান না। বিয়ে করেছেন। দুই সন্তানকে বড় করেছেন। বেড়াতে যান। মোটের উপরে সাধারণ শান্ত জীবনযাপন। সব ওলটপালট করে দিল অলিম্পিকস। শাসক কিম জং উনের দেশ এত বছর পরে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একযোগে কুচকাওয়াজে রাজি হয়েছে। উত্তেজনা সরিয়ে দু’দেশের মহিলাদের যৌথ আইস হকি দল নামবে মাঠে। কিন্তু অতীতের দুঃস্বপ্ন পিছু ছাড়ে না কিমের। ক্ষমা করা হয়েছে, তবু তাঁর প্রশ্ন নিজের কাছেই, ‘‘আমার পাপের কি ক্ষমা হয়? মনে তো হয় না।”

অলিম্পিক্সের প্রাক্‌লগ্নে বেশ কিছু জায়গায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিম। চরবৃত্তির জীবনটা এখন অনেকটাই ফিকে ৫৭ বছরের প্রৌঢ়ার কাছে। তবু যেন দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম পা রাখার দিনটি ভোলেননি। সন্ত্রাসের অপরাধী হিসেবে ধরা পড়ার পরে ওই অচেনা দেশে এসে মনে মনে পণ করেছিলেন, ‘‘মরে যাব, একটি কথাও বলব না। দোষ স্বীকার তো দূরের কথা।’’ ১৯৮৯ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু পরের বছর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট রো তায়ে-উ তাঁকে ক্ষমা করে দেন এই যুক্তিতে যে এই কিম ষড়যন্ত্রকারীদের (পিয়ংইয়ংয়ের শাসক কিম পরিবার) নির্দেশে শুধু কাজ করেছিলেন, তাই সরাসরি তাঁর কোনও দোষ নেই।

বিমানে নিহত যাত্রীদের পরিবারের উদ্দেশে লিখে ফেলেন একটা বই: ‘টিয়ার্স অব মাই সোল।’ শাসক কিমের দেশ এখনও নজর রাখে তাঁর উপরে। হাত ফস্কে যাওয়া চরদের এত সহজে ছেড়ে দেয় না পিয়ংইয়ং। দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ প্রহরায় থাকেন কিম। নিজেকে যতটা আড়ালে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করে যান আপ্রাণ।

2018 Winter Olympics North Korea Kim Hyon-hui Former Spy Killing অলিম্পিক্স
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy