টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে এক আজব লটারির। এই লটারি জিতলে টাকা-পয়সা বা বহুমূল্যের কোনও পুরস্কার মিলবে না। মিলবে মৃত্যুর পরে এক বিরল ‘অভিজ্ঞতা’। প্রথিতযশা মানুষদের সঙ্গে প্যারিসের নামজাদা সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত হওয়ার সুযোগ।
লেখক অস্কার ওয়াইল্ড থেকে গায়ক জিম মরিসন। পেয়র-লাশেজ় বা মঁপার্নাসের মতো প্যারিসের বিভিন্ন সমাধিক্ষেত্রে বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সমাধি রয়েছে। জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে দেশ-বিদেশের ভক্তেরা সেখানে ভিড় জমান বছরভর। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বেশির ভাগ সমাধিক্ষেত্রেরই অত্যন্ত জীর্ণ দশা।
সম্প্রতি প্যারিস মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করেন, যে সব মানুষ এই সমাধিক্ষেত্রগুলি দেখতে আসেন, তাঁদের অনেকেই পরে দুঃখপ্রকাশ করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, এই ঐতিহাসিক স্থানগুলির রক্ষণাবেক্ষণে তাঁরা কোনও সাহায্য করতে পারেন কি না। কিন্তু শহরের মিউনিসিপ্যাল আইন অনুযায়ী, কোনও কবরস্থানের জন্য এ ভাবে বেসরকারি অনুদান নেওয়া সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন ধনকুবেরের কাছ থেকে সাহায্যের প্রস্তাব এলেও কর্তৃপক্ষ সেই অনুদান নিতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত এক অভিনব পন্থা খুঁজে বার করেছেন মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা করা হয়েছে, এই সমস্যার সমাধানে এক লটারির আয়োজন করা হচ্ছে। বিজয়ীরা প্যারিসের বিখ্যাত কয়েকটি সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য— অবহেলিত সমাধিক্ষেত্রগুলির সংস্কার করা। এবং একই সঙ্গে প্যারিসবাসীকে তাঁদের প্রিয় শহরে সমাহিত হওয়ার একটি জায়গা নিশ্চিত করা।
বিশ শতকের গোড়া থেকে প্যারিসের সব সমাধিক্ষেত্রেই বিন্দুমাত্র জায়গা বাকি নেই। ফলে শহরবাসীর পক্ষে এখানে সমাধিক্ষেত্রে কবরপাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সারা জীবন এই শহরে কাটিয়ে মৃত্যুর পরে তাঁদের ‘যেতে হয়’ শহর ছেড়ে। মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা দেখেছেন সংস্কার করে প্রতিটি সমাধিক্ষেত্রেই কম-বেশি ১০টা নতুন কবরের জায়গা বার করা যাবে। এই সংস্কার করতে ও যে কবরগুলি রয়েছে সেগুলির ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা সংগ্রহ করা হবে লটারির মাধ্যমে। আর লটারিতে যাঁরা জিতবেন, তাঁরা ঠাই পাবেন সমাধিক্ষেত্রে। পূর্ণ হবে বহু দিনের মনোবাঞ্ছা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)