সামরিক সাহায্য বন্ধের পাশাপাশি ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়াও স্থগিত রেখেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মনে করা হচ্ছে, এ ভাবেই শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে আমেরিকা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, আমেরিকার সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় বসতে তিনি প্রস্তুত। সেই আবহেই সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাল, শুধু ইউক্রেন নয়, বরং এ বিষয়ে জ়েলেনস্কিকে সঙ্গ দিতে আমেরিকায় যেতে পারেন ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মতো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরাও।
ফরাসি সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, শীঘ্রই ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠকে যোগ দিতে জ়েলেনস্কির সঙ্গে ওয়াশিংটনে যেতে পারেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। সেখানে সঙ্ঘবদ্ধ ইউরোপীয় ফ্রন্টের প্রতিনিধিত্ব করবেন তাঁরা। তবে বৈঠকটি কোথায় হবে, তা নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। ফ্রান্স জানিয়েছে, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইউরোপীয় সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে পাঠানোর কথাও ভাবতে পারে তারা।
আরও পড়ুন:
বুধবার রাতে এক ভাষণে জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘ইউক্রেন এবং আমেরিকা— দু’পক্ষই আসন্ন বৈঠকের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। খুব শীঘ্রই আলোচনায় গতি আসতে চলেছে।’’ পাশাপাশি, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্রাসেল্স শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দিচ্ছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের থেকে তিনি একটি চিঠি পেয়েছেন। ওই চিঠিতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জ়েলেনস্কি। ঘটনাচক্রে, সোমবার ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়া স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তার পরেই জ়েলেনস্কির এই পরিবর্তন। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর গত শুক্রবারের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য সমাজমাধ্যমে দুঃখপ্রকাশও করেন জ়েলেনস্কি।
আমেরিকায় দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়ে অন্য অবস্থানের পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার বার্তাও দিয়েছিলেন। তার মাঝে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সঙ্গে খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যে হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্প এবং ভান্সের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। ভেস্তে যায় আমেরিকা-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি। তার পর থেকেই আতশকাচের তলায় রয়েছে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেনকে ‘চাপে রাখতে’ একের পর এক সাহায্য বন্ধের ঘোষণা করছেন ট্রাম্প। তবে এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে কিভকে ইতিমধ্যেই ২৮০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার। ট্রাম্প-বৈঠক থেকে চলে আসার পর জ়েলেনস্কিকে জড়িয়ে ধরেছিলেন স্টার্মার। ইউক্রেনের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছিলেন তিনি। সে ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার বিদেশনীতি কোন খাতে বয়ে চলে, সে দিকেই তাকিয়ে বিশ্ব।