খুব সম্প্রতি সংঘর্ষবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইজ়রায়েল এবং হামাস। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফার শর্ত মেনে স্বাক্ষরিত সেই চুক্তি অনুযায়ী, বেঁচে থাকা ইজ়রায়েলি পণবন্দিরা ঘরে ফিরেছেন। গত দু’বছরের যুদ্ধে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজ়ায় ফিরে গিয়েছেন ইজ়রায়েল থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় হাজার দু’য়েক প্যালেস্টাইনিও। এ বার ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তার ভুগছেন গাজ়াবাসীরা। তাঁদের প্রশ্ন, আপাত শান্তির মুখ দেখানো এই সংঘর্ষবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে তো? ইজ়রায়েল কথা রাখবে তো?
প্রশ্ন থাকছেই। কারণ আজই ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করায় পাঁচ প্যালেস্টাইনিকে গুলি করে হত্যা করেছে তারা। সেনার বক্তব্য, সাঙ্কেতিক হলুদ লাইন পার করে বেশ কয়েক জন প্যালেস্টাইনি ইজ়রায়েলি সেনা বাহিনীর দিকে এগিয়ে আসছিল। তাঁদের বার বার সতর্ক করে, হুঁশিয়ারি দিয়েও থামানো যায়নি। শেষে গুলি চালাতে বাধ্য হয় সেনা। প্যালেস্টাইনের এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, এই দাবি মিথ্যে। নিহতেরা কোনওভাবেই বিপদসীমা লঙ্ঘন করেননি।
গাজ়া শহরের বাসিন্দা হানিয়া এখন মধ্য গাজ়ায় দের অল বালায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা হয়েছে মানে রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে, এমন ভাবা ভুল। তবে এটি সুস্থ ভবিষ্যতের দিকে প্রথম পদক্ষেপ বলা যায়।’’ হানিয়েদের দুশ্চিন্তা এখন গাজ়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে। ট্রাম্পের শর্ত মেনে গাজ়ার আর ক্ষমতা কায়েম রাখতে পারবে না হামাস। তাহলে গাজা শাসন করবে কারা? নৈরাজ্য আর নিয়ন্ত্রণহীন গাজ়া যে হামাস বাহিনীর শাসনের থেকেও কঠিন হতে চলেছে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। গাজ়ার বাসিন্দা হামিদ আবেদুল বলেন, “আমি হামাস প্রশাসন চাই না। কিন্তু আইনের শাসন চাই। দায়িত্ব নিয়ে কেউ সেটা করুক। শূন্যস্থানের ফল ভয়াবহ হতে পারে।”
এমনই অনেক প্রশ্ন এখন মাথাচাড়া দিচ্ছে গাজ়ায়। শর্ত মেনে হামাস কি অস্ত্রত্যাগ করবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? আগামী দিনে গাজ়ার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে? সর্বোপরি স্বাধীন প্যালেস্টাইন গড়ে উঠবে কি? যুদ্ধ শুরুর আগে এই ভূখণ্ডের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল ছিল গাজ়া শহর। সেই শহরের ৯০ শতাংশ বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে কিংবা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহর পুনর্নির্মাণ করতে বাইরের সাহায্য লাগবে। কিন্তু সেই সাহায্য করবে কে? আপাতত সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ছবি ও ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। গাজ়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আরব দুনিয়ার দেশগুলিও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)