Advertisement
E-Paper

ত্রস্ত কর্মীরা, উড়ান বাতিল জার্মান উইঙ্গসের

সহকর্মীদের ভয়াবহ পরিণতি বিশ্বাস করতে পারছেন না। দুর্ঘটনার আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে এখনও। তাই ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে বুধবার কাজে যোগ দিলেন না জার্মানউইঙ্গস বিমান সংস্থার অনেক কর্মী। কর্মী সঙ্কটের জেরে এ দিন বেশ কিছু উড়ান বাতিল করতে হল লুফত্‌হানসার এই শাখা সংস্থাকে। এমনকী পরিষেবা কবে স্বাভাবিক হবে, সে সম্পর্কেও তারা নিরুত্তর।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৮
চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: রয়টার্স।

চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: রয়টার্স।

সহকর্মীদের ভয়াবহ পরিণতি বিশ্বাস করতে পারছেন না। দুর্ঘটনার আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে এখনও। তাই ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে বুধবার কাজে যোগ দিলেন না জার্মানউইঙ্গস বিমান সংস্থার অনেক কর্মী। কর্মী সঙ্কটের জেরে এ দিন বেশ কিছু উড়ান বাতিল করতে হল লুফত্‌হানসার এই শাখা সংস্থাকে। এমনকী পরিষেবা কবে স্বাভাবিক হবে, সে সম্পর্কেও তারা নিরুত্তর। একে তো দুর্ঘটনার ভয়, তার উপর জার্মানউইঙ্গসের নাজেহাল দশা—সব মিলিয়ে ম্যানচেস্টার, থিহরো, ডুসেলডর্ফের মতো বহু বিমানবন্দরেই বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

বিমান সংস্থার পেশাদারিত্ব নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। গত বছর মার্চে দক্ষিণ চিন সাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় হারিয়ে যায় মালয়েশীয় বিমান সংস্থার বিমান এমএইচ-৩৭০। চার মাসের মাথায় ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেই মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সেরই বিমান। সে বার জঙ্গি ক্ষেপণাস্ত্রে মাঝ আকাশে ধ্বংস হয়ে যায় এমএইচ-১৭। ২০১৪-এর ২৮ ডিসেম্বর। ফের বিপর্যয়। এবং ফের সেই মালয়েশীয় এয়ারলাইন্স যোগ। ওই সংস্থারই শাখা সংগঠন এয়ার এশিয়ার উড়ান ১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে ভেঙে পড়ে জাভা সাগরে। এক বছরে তিন-তিনটি বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলেও ঘুরে দাঁড়ায় মালয়েশীয় এয়ারলাইন্স। জার্মানির জাতীয় বিমান সংস্থা লুফত্‌হানসার শাখা হয়েও জার্মানউইঙ্গস কেন এমন পেশাদারিত্ব দেখাতে পারল না, সেই প্রশ্ন তাই ঘুরপাক খাচ্ছেই।

দুর্দিনে পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ উঠলেও কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন লুফত্‌হানসার সিইও কারস্টেন স্পোর। তিনি বলেন, “কর্মীদের মনোবল বাড়ানোটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে দরকারি। উড়ান ওঠানামা স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টা বরং কম গুরুত্বপূর্ণ।”

মঙ্গলবার সকালে বার্সেলোনা থেকে ডুসেলডর্ফ যাওয়ার পথে আল্পস পর্বতের দুর্গম অঞ্চলে ভেঙে পড়ে জার্মানউইঙ্গসের এয়ারবাস এ-৩২০। দেড়শো আরোহীর কেউই আর জীবিত নেই, দুর্ঘটনাস্থলের উপরে এক বার টহল দিয়ে এসে কাল জানিয়ে দেন উদ্ধারকারীরা। বুধবার সকালে আবহাওয়া ভাল থাকায় গতি পায় ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ। দুপুরে কপ্টারে করে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল।

বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও যাত্রীদের দেহ উদ্ধারে ওই প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন ৩০০ পুলিশ ও ৩৮০ জন দমকল কর্মী। চারিদিক বরফে ঢাকা, নদী খাত, খাড়াই পাহাড়ের ঢালে যেখানে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, রাস্তা ছেড়ে পাহাড়ি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেখানে পৌঁছতে সময় লাগে অন্তত তিন ঘণ্টা। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, এয়ারবাস এ-৩২০র কোনও বড় অংশ অবশিষ্ট নেই। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বিমানের ব্ল্যাক বক্স দেখতে পাওয়া গিয়েছিল আগেই। আজ তা তুলে আনতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ব্ল্যাক বক্সের দু’টো অংশ। চালকদের নিজেদের মধ্যে কথা, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ— এ সব তথ্য ধরে রাখে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার। বিমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঠিক কাজ করছে কি না, তা জানা যায় ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থেকে। জার্মানউইঙ্গসের ওই বিমানটির শুধু ককপিট ভয়েস রেকর্ডারই ভাঙাচোরা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। তবে এতে তথ্য বিশ্লেষণে অসুবিধে হবে না বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

আজ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জট বাঁধছে মূলত দু’মিনিটের হিসেব ঘিরে। দুর্ঘটনার আগে যখন হুড়মুড়িয়ে বিমানটির উচ্চতা কমছিল (১০টা ৩০ ও ৩১ মিনিট নাগাদ) তখন চালক কী করছিলেন, জানতে পারলেই রহস্য অনেকটা কাটবে বলে মনে করছেন তাঁরা। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, তা এখনই বলতে না পারলেও তদন্তকারীদের অনুমান মাঝ আকাশে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়নি এয়ারবাস এ-৩২০। তাই এর পিছনে জঙ্গি-যোগের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিমানের দুটো ইঞ্জিনই যদি মাঝ পথে কাজ বন্ধ করে দেয় তা-ও এই ধরনের বিমান বেশ কিছু ক্ষণ ভাসিয়ে রাখা সম্ভব। প্রায় আট মিনিট ধরে যখন বিমানের উচ্চতা হু হু করে কমলো, সেই সময় চাইলে চালক বিপদ সঙ্কেত পাঠাতে পারতেন। কিন্তু তা-ও আসেনি। কেন? রহস্য কাটাতে তাই দু’মিনিটের হিসেব মেলানোর চেষ্টা চলছে জোরকদমে।

আর এখানেই নতুন সম্ভাবনার কথা বলছেন অনেকে। পেশাদার চালকদের একটি ফোরাম আজ দাবি করা হয়, ফ্লাইট ৪ইউ৯৫২৫-এর উইন্ডস্ক্রিনে ফাটল ছিল। সেখান দিয়ে হাওয়া ঢোকায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। দুই চালক হয়তো কিছু বোঝার আগে নেতিয়ে পড়েছিলেন। আর তাই আসেনি বিপদ বার্তাও। বিমানটির কাঠামোগত ত্রুটি নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে সোমবারের একটি ঘটনা সামনে আসার পর। দুর্ঘটনার এক দিন আগেই এয়ারবাসটির নাকের দিকের দরজায় মেরামতি হয়। বিমান সংস্থা আজ তা স্বীকার করে নিলেও তাদের দাবি, সুরক্ষা-প্রশ্নে আপস করা হয়নি।

উত্তর জানে শুধু ব্ল্যাক বক্স।

plane crash plane crash france germanwings Airbus A320 Airline black box
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy