Advertisement
E-Paper

‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমার শরীর ছিঁড়ে খেয়েছিল ওরা’

স্বপ্নের শহরে পা দেওয়ার পর থেকেই তাঁর স্বপ্নভঙ্গের শুরু। এসেছিলেন হোটেলের কাজ নিয়ে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার যে সংস্থা আমেরিকায় তাঁকে ওই চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, তাদের গোটা পদ্ধতিটাই যে ভাঁওতায় ভরা ছিল তা বুঝতে পারেননি বছর চব্বিশের শান্দ্রা। কাজেই, নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে নামার পর থেকেই যৌন ব্যবসার অলিগলিতে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ১৮:৪৭

স্বপ্নের শহরে পা দেওয়ার পর থেকেই তাঁর স্বপ্নভঙ্গের শুরু। এসেছিলেন হোটেলের কাজ নিয়ে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার যে সংস্থা আমেরিকায় তাঁকে ওই চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, তাদের গোটা পদ্ধতিটাই যে ভাঁওতায় ভরা ছিল তা বুঝতে পারেননি বছর চব্বিশের শান্দ্রা। কাজেই, নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে নামার পর থেকেই যৌন ব্যবসার অলিগলিতে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সেটা ২০০১ সালের জুন মাস। এর পর টানা প্রায় তিন বছর তিনি আমেরিকার বিভিন্ন যৌনপল্লিতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। সঙ্গে মাদক থেকে মারধর— বাদ যায়নি কিছুই। সম্প্রতি শান্দ্রা ওই তিন বছরের ভয়ানক অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে এনেছেন। শিউরে ওঠার মতো সেই লেখা প্রকাশ করেছে বিবিসি।

সেই লেখায় শান্দ্রা জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ায় একটি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন তিনি। সেই সময়ে বিশ্ব জুড়ে মন্দা দেখা দেয়। চাকরি চলে যায় তাঁর। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে কী করবেন! একটা কাজ তো চাই। কিন্তু, তাঁকে এই পরিস্থিতিতে কাজ দেবে কে? সেই সময়ে খবরের কাগজে বিদেশি হোটেলে চাকরির বিজ্ঞাপনটি নজরে পড়ে তাঁর। বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ করার মতো মাইনের পাশাপাশি আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম লেখা ছিল সেখানে। আশায় বুক ঠুকে বিজ্ঞাপনে লেখা ঠিকানায় আবেদনপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শান্দ্রা। কয়েক দিনের মধ্যে ডাক আসে।

(এর পর পড়তে ২ ক্লিক করুন)

বেশ কয়েক দফা ইন্টারভিউ দিতে হয় তাঁকে। বিভিন্ন প্রশ্নের পাশাপাশি সেখানে হাঁটাচলা, কথাবার্তা, ওঠবোস— সব কিছুরই ‘পরীক্ষা’ দিতে হয়। এমনকী, ছবি তুলতে হয় খোলামেলা পোশাক পরে। প্রশ্ন করেন শান্দ্রার মতো অনেকেই। তখন তাঁদের বলা হয়েছিল, হোটেলের চাকরি তো আসলে অতিথি সামলানোর কাজ। তাঁদের ঠিকঠাক পরিষেবা দিতে এবং আকৃষ্ট করতে এ সবের প্রয়োজন রয়েছে। মেনে নিয়েছিলেন ওঁরা। এর পর সেই দিনের অপেক্ষা। মেয়েকে তাঁর মায়ের কাছে রেখে আমেরিকা পাড়ি দেন শান্দ্রা। পরিকল্পনা ছিল, বছর পাঁচেক চাকরি করে রোজগারের টাকা জমিয়ে ফের দেশে ফিরে আসবেন মেয়ের কাছে। জমানো টাকাতেই দু’জনের চলে যাবে, এই ভাবনায়। তখনও তিনি জানতেন না কী ভয়াবহ জীবন আমেরিকায় তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে!

আরও খবর
মায়ের সামনেই ছুরি দিয়ে কেটে ফেলল চার বছরের মেয়ের মাথা!

শান্দ্রা লিখছেন, শিকাগোর একটি হোটেলে তাঁর জয়েন করার কথা ছিল। কিন্তু, আমেরিকার সেই শহর থেকে প্রায় ৮০০ মাইল দূরে নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে কেন তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল তা প্রথমে বুঝতে পারেননি তিনি। বিমান থেকে নেমে এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে পৌঁছে দেখেন এক জন হাতে শান্দ্রার ছবিওয়ালা পোস্টার নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আগে থেকেই জানতেন, জনি নামের এক জন তাঁকে বিমানবন্দরে নিতে আসবে। কিন্তু, নিজের যে ছবি জনির হাতের পোস্টারে দেখেছিলেন তাতে মাথা প্রায় ঘুরে যাওয়ার জোগাড় হয় তাঁর। ইন্টারভিউয়ের সময় ইন্দোনেশিয়ার সংস্থা খোলামেলা পোশাকে তাঁর যে ছবি তুলেছিল, এ তো সেই ছবি! খুঁতখুঁতে মনে তবুও এগিয়ে যান তিনি জনির দিকে। পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সমস্ত কাগজপত্রই জমা দিয়ে দিতে হয় তাঁর কাছে।

শিকাগো পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল জনির। অন্য দুই মহিলার সঙ্গে তাই জনির গাড়িতে উঠে পড়েন শান্দ্রা। কিন্তু, কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই জনির গাড়ি থেমে যায়। তাঁদের নেমে যেতে বলা হয়। অন্য একটা গাড়িতে শান্দ্রাদের তুলে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ওই চালক জনির হাতে তুলে দেয় বেশ কিছু ডলার। ফের সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে শান্দ্রার মনে। এ ভাবে তিন বার চালক এবং গাড়ি বদলের পর একটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁদের তোলা হয়। আর সেই প্রথম বারের জন্য শান্দ্রারা বুঝতে পারেন, তাঁরা কোনও হোটেল নয়, পৌঁছেছেন যৌনপল্লিতে। চতুর্থ গাড়ির চালক ওই বাড়ির দরজায় টোকা মেরে ‘মামা-সান’ বলে ডেকেছিলেন। এ শব্দের মানে শান্দ্রা জানতেন। যৌনপল্লির প্রধান মহিলাকেই ও নামে ডাকা হয়। এর পরেই সেই চালক সংযোজন করেছিলেন ‘নতুন মেয়ে’ এসেছে।

(এর পর পড়তে ৩ ক্লিক করুন)

ঘরের দরজা খুলতেই ভয়ানক সেই দৃশ্য নজরে পড়ে। বছর ১২-র এক কিশোরীকে হকির ব্যাট দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। তার নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তখনই ঘাড়ের কাছে রিভলভারের ঠান্ডা নলের ছোঁয়া পান শান্দ্রা। এর পরই জীবনে প্রথম বার নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ‘সেক্স’ করতে হয় তাঁকে। এক বার নয়, একাধিক বার। একাধিক ‘খদ্দের’ সামলানোর পর ফের তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় অন্য এক বাড়িতে। বাইরে থেকে সাধারণ বাড়ির মতো লাগলেও, আসলে তা ছিল একটি ডিস্কো। সেখানে গিয়ে শান্দ্রারা দেখেন উলঙ্গ মহিলারা সবাই ‘খদ্দের’দের জন্য অপেক্ষা করছেন। ওঁদেরকেও সেই দলে ভিড়িয়ে দেওয়া হয়। সেবন করতে হয় কোকেন-সহ বিভিন্ন মাদক। সারাটা বিকেল সেখানে ‘খদ্দের’দের সামলে সন্ধেবেলায় এক শপিং মলে যান তাঁরা। বেশ কিছু যৌন-খেলনা এবং খোলামেলা পোশাক তাঁদের কিনে দেওয়া হয়। ডায়েরি লেখার অভ্যেস ছিল বলে ওই রাতেই শান্দ্রা লিখে রেখেছিলেন গোটা দিনের ঘটনা।

পরের দিন জনি এসে গোটা ব্যাপারের জন্য ক্ষমা চায় ওঁদের কাছে। শান্দ্রা তখনকার মতো ক্ষমা করে দেন ওকে। ভাবেন, আবার নতুন করেও শুরু করা যেতে পারে। জনি তেমন আশাই দেখিয়েছিল। পর দিন সকালে শিকাগোর উদ্দেশে ফের তাঁরা রওনা হন জনির গাড়িতে। এবং আবারও একই ভুল করেন ওঁরা। আইডেন্টিটি কার্ড বানানোর ছবি তোলার অছিলায় এঁদের নিয়ে তোলা হয় এক ক্যাসিনোতে। সেখানেও যৌনতা। এ বার শুধু সেক্স নয়, আদেশ মতো কাজ না করলে খদ্দেরদের মারধরও কপালে জুটেছিল।

এ ভাবেই দিনের প্রায় পুরো সময়টাই যৌনতা বেচতে হয়েছে শান্দ্রাদের। বছর দুয়েক ধরে বেশ কয়েক বার হাত বদল হয়েছেন। এক যৌনপল্লিতে এক পুরুষের কাছে নিজের দুর্দশার কথা বলেছিলেন তিনি। ওই পুরুষই তাঁকে পালানোর রাস্তা বাতলান। কিন্তু, পাসপোর্ট তো জনির কাছে! তাঁকে খুঁজে পাবেন কোথায় শান্দ্রা। ওই যুবকের সঙ্গে পালালেন শান্দ্রা। কোনও লাভ হল না। হাত ঘুরিয়ে ফের বিক্রি হয়ে গেলেন। এবং এ বারও সেই জনির কাছেই। এর পর মারধরের পালা। এক দিন রাতে একটি যৌনপল্লির ঘরের জানলা থেকে বিছানার চাদর, কাপড়, জামা একের সঙ্গে এক বেঁধে ঝুলে পড়লেন শান্দ্রা। কিন্তু, এতটা উপরের ঘর থেকে মাটির নাগাল পাননি তিনি। ফলে, ফের সেই ‘দড়ি’ বেয়ে উপরে উঠতে হয় তাঁকে।

(এর পর পড়তে ৪ ক্লিক করুন)

দিনের পর দিন সেক্স, মাদক, মারধরের কবলেই কেটে যায় তিনটে বছর। শেষে এক দিন পালাতে পারলেন তিনি। নিকি নামের অন্য এক ‘সহকর্মী’র সঙ্গে জানলা গলে দৌড়ে পালিয়ে আসেন। কাছাকাছির এক থানায় যান। কিন্তু, পুলিশ কোনও রকম সাহায্য করেনি তাঁদের। শান্দ্রাদের কাছে পাসপোর্ট না থাকায় বিশ্বাসই করেনি তাঁরা। ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের ঠিকানা ফোন নম্বর চেয়েও নিরাশ হতে হয় তাঁদের। থানা থেকে বেরিয়ে কাছের এক ফলপট্টিতে যান তাঁরা। সেখানে এক ফল ব্যবসায়ী ওঁদের কাহিনি শুনে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনিই ফোন করে এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এফবিআই শান্দ্রাদের অভিযোগ পেয়ে ওঁদের নিয়ে সেই সব যৌনপল্লিতে তল্লাশি চালায়। গ্রেফতার করা হয় জনি-সহ বেশ কয়েক জনকে।

সেই মামলা এখনও চলছে। ২০০৪ সালে এফবিআইয়ের সাহায্যে ইন্দোনেশিয়ার বাড়িতে ফিরে এসেছেন শান্দ্রা। এখন মেয়েকে নিয়ে সেখানেই আছেন তিনি। কিন্তু, পুরনো স্মৃতি এখনও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। রাতের ঙুম প্রতি দিন ভাঙিয়ে দেয় জনির মুখ। ক্ষতবিক্ষত সেই স্মৃতি নিয়েই মেয়েকে তিল তিল করে বড় করে তুলছেন শান্দ্রা।

sex trafficking MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy