Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মেট্রোর ভাড়া বাড়ায় ফুঁসছে জনতা

লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, উত্তপ্ত চিলেতে পুড়ে মৃত্যু ৩ জনের

সামাজিক ও আর্থিক অব্যবস্থা নিয়ে গত এক সপ্তাহ যাবৎ ফুঁসছে লাতিন আমেরিকার দেশটি। সমাজে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে আর্থিক অবস্থার ব্যাপক ফারাক নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশের একটি বড় অংশ।

মেট্রোর কামরা পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। রবিবার চিলের সান্তিয়োগোয়। এপি

মেট্রোর কামরা পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। রবিবার চিলের সান্তিয়োগোয়। এপি

সংবাদ সংস্থা
সান্তিয়োগো শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

বাস-মেট্রোর ভাড়া বাড়ার প্রতিবাদে উত্তপ্ত চিলে। বিক্ষোভের তৃতীয় দিনেই মৃত্যু হল ৩ জনের। অভিযোগ, আজ বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের সময়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় সান্তিয়োগোর একটি সুপারমার্কেটে। ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান দু’জন। পরে মৃত্যু হয় এক জনের।

সামাজিক ও আর্থিক অব্যবস্থা নিয়ে গত এক সপ্তাহ যাবৎ ফুঁসছে লাতিন আমেরিকার দেশটি। সমাজে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে আর্থিক অবস্থার ব্যাপক ফারাক নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশের একটি বড় অংশ। তার উপরে জুড়েছে জীবনযাত্রার বিপুল খরচ। অশান্তি চরমে ওঠে মেট্রোর ভাড়া বাড়ায়। দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম ও আধুনিকতম ৯০ মাইলের এই মেট্রো পরিষেবা চিলের অন্যতম গর্ব। গত জানুয়ারিতেই ২০ পেসো করে ভাড়া বেড়েছে। তার পরেই ফের ভাড়া ৮০০ থেকে ৮৩০ পেসো হয়ে যাওয়ায় খেপে ওঠে সাধারণ মানুষ। যদিও প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, মুদ্রার দাম ওঠানামার কারণে পরিবহণের ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন ছিল।

এ সব নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতেই শুক্রবার সান্তিয়াগোতে জমায়েত হন অন্তত হাজার খানেক মানুষ। ২৯ বছরের এক বিক্ষোভকারীর কথায়, ‘‘রাজনীতিকরা তা-ই করছেন যা তাঁরা করতে চান। বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন তাঁরা। আমরা ক্লান্ত।’’ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অশান্তি। পুলিশ ও সেনার গাড়িতে ঘেরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের বাইরেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে প্রতিবাদীদের। এক সময়ে একের পর এক বাসে আগুন ধরাতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। রেহাই পায়নি মেট্রো পরিষেবাও। বহু মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুনে ছারখার করে দেয় উত্তেজিত জনতা। যার জেরে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয় বাস ও মেট্রো পরিষেবা। বিক্ষুব্ধদের রুখতে জল কামান, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় শুক্রবার ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরা।

শনিবার সকালেই কয়েক’শো সেনা ও ট্যাঙ্ক নামানো হয় সান্তিয়োগোর রাস্তায়। ১৯৯০ সালে আউগুস্তো পিনোশের সামরিক স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে এই প্রথম। শুক্রবারের ভয়াবহ তাণ্ডব ও ক্ষয়ক্ষতির পরে পরিস্থিতি বিচার করে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট। তার পরেও গত কাল দফায় দফায় শহরের নানা প্রান্তে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় প্রতিবাদকারীদের। চিলের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার সদর দফতরে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। অবস্থা সামাল দিতে শনিবার রাত দশটা থেকে রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত রাজধানী সান্তিয়াগোতে কার্ফু জারি করা হয়।

এরই মধ্যে শুক্রবার একটি ছবি ভাইরাল রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, গোটা শহর যখন জ্বলছে, তখন পরিবারের সঙ্গে পিৎজ়া খাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। বিরোধীরা বলছেন, নাতির জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে যে ভাবে বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট, তাতে স্পষ্ট সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ শূন্য।

পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন দিনে তিনশো’র বেশি বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছে। ১৫৬ জন পুলিশ ও ১১ জন নাগরিক আহত। সব রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলো বাতিল করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে ১৩৬ টির মধ্যে ৪১টি মেট্রো স্টেশন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আগামিকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পরিষেবা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Metro Fare Chile Protest Clash With Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE