Advertisement
E-Paper

ট্রাম্প যুদ্ধে নামলে কি পুতিন ইরানের পাশে? নেতানিয়াহুর ‘প্রতিজ্ঞা’ আর খামেনেইয়ের বার্তায় সরগরম পশ্চিম এশিয়া

বৃহস্পতিবার আমেরিকাকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানান, আমেরিকা ইরানে হামলা চালালে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৫ ২২:৩১
(বাঁ দিকে) ভ্লাদিমির পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প।

(বাঁ দিকে) ভ্লাদিমির পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা যুদ্ধে নামবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই সেই জল্পনা জিইয়ে রেখেছেন। বলে রেখেছেন, তিনি নামতেও পারেন, আবার না-ও নামতে পারেন। কিন্তু তিনি কী করবেন, তা কেউ জানে না। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া পাল্টা হুঁশিয়ারি দিল আমেরিকাকে। স্পষ্ট জানিয়ে দিল, আমেরিকা যুদ্ধে যোগ দিলে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে! তাতে নতুন করে জল্পনা, ট্রাম্প মাঠে নামলে কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ইরানের পাশে দাঁড়াবেন?

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আমেরিকাকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানান, আমেরিকা ইরানে হামলা চালালে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে। ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘‘ওই ধরনের পদক্ষেপ করলে পুরো পরিস্থিতিই ঘেঁটে যেতে পারে।’’ তাতে পরমাণু বিপর্যয় ঘটতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া।

প্রসঙ্গত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ নিউজ’ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের শেষেই ইরানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে আমেরিকা! যদিও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই দাবির আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি। আবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াশিংটনের একটি অংশ চাইছেন, আমেরিকা এই যুদ্ধে নিজেদের জড়িয়ে ফেলুক। যুদ্ধে না জড়িয়েও কী ভাবে স্বার্থরক্ষা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে হোয়াইট হাউসে।

গত কয়েক দিন ধরেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকেও হুমকি দিয়ে চলেছে আমেরিকা এবং ইজ়রায়েল। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি, খামেনেইকে হত্যা করলেই যুদ্ধের অবসান হবে। ট্রাম্পও দাবি করেছেন, তিনি ইরানের ধর্মীয় নেতার গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। চাইলেই তাঁকে হত্যা করতে পারে আমেরিকা। কিন্তু ওয়াশিংটন এখনই তা করবে না। এই বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার পুতিনের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি কোনও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে চান না। উত্তরের জন্য জোরাজুরি করা হলে খানিক অনিচ্ছা নিয়েই পুতিন জানান, তিনিও শুনেছেন যে, খামেনেইকে হত্যার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চান না। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “ইরানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সব জটিলতা সত্ত্বেও সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষেই গোটা সমাজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।”

ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষ নিয়ে ইতিমধ্যেই ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে ঘণ্টাখানেকের দীর্ঘ ফোনালাপ হয়েছে। সূত্রের দাবি, পুতিন ইরানের উপর ইজ়রায়েলি হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্পের কাছে। ইরান রাশিয়ার বন্ধু দেশ বলেই পরিচিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রেমলিনের মিত্র হয়েই থেকেছে তেহরান। যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক রাশিয়াকে ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে গিয়েছে তারা। অনেকের মত, এ বার বন্ধুর জন্য রাশিয়া মাঠে নামলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই!

বৃহস্পতিবার সপ্তম দিনেও ইরান-ইজ়রায়েলের মধ্যে কোনও সংযম লক্ষ করা গেল না। বরং, ইরানের ছো়ড়া মিসাইলে ইজ়রায়েলের দক্ষিণ প্রান্তে বেরশেবা শহরের একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও তেতে উঠেছে। হাসপাতালের উপর হামলায় অন্তত ৬৫ জন জখম হয়েছেন বলে দাবি। হামলা চলেছে ইজ়রায়েলি সেনার কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স (আইডিএফ সি৪আই) সদর দফতরেও। তেল আভিভেও ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে পড়েছে। এর পরেই ইরানকে ফের হুমকি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। বলেছেন, তেহরানকে এর মূল্য চোকাতেই হবে! তাঁর কথায়, ‘‘সকালে ইরানের সন্ত্রাসবাদী স্বৈরাচারীরা বেরশেবার সোরোকা হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। হামলা হয়েছে লোকালয়েও। ওদের থেকে পাই-পয়সার হিসাব বুঝে নেব।’’ ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎ‌জ়ও একই সুরে বলেছেন, ‘‘ইরানকে এর পরিণাম ভুগতে হবে।’’ ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরালো করারও বার্তা দিয়েছেন তিনি।

ইজ়রায়েলের হাসপাতালে হামলার আগে ইরানের আরাক পরমাণুকেন্দ্রেও হামলা চলেছে। ইজ়রায়েল ওই হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ। যদিও ইরানের দাবি, হামলার আগেই পরমাণুকেন্দ্রটি ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়ানোর কোনও আশঙ্কা নেই। যুদ্ধের আবহে বৃহস্পতিবার ফের জাতির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন খামেনেই। তিনি বলেছেন, ‘‘যদি শত্রু বুঝতে পারে যে, আপনারা তাদের ভয় পান, তা হলে তারা আপনাদের ছেড়ে দেবে না। এখনও পর্যন্ত আপনাদের যে মনোভাব ছিল, তা জিইয়ে রাখুন, শক্তি নিয়ে এগিয়ে যান।’’

তিন দেশের সঙ্গে ইরানের বৈঠক

ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠকে বসবেন বলে জানালেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তাঁকে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করেছে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম। আরাকচি এ-ও জানালেন, এই তিন দেশের অনুরোধে জেনেভায় বৈঠকে বসবেন তিনি। সেই বৈঠকে থাকবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিকও। ইরান এই বৈঠকে রাজি হওয়ার পরেই জল্পনা, তবে কি আমেরিকা, ইজ়রায়েল-সহ পশ্চিমের দেশগুলির চাপে নত হতে চলেছে ইরান! সূত্রের খবর, সুইৎজ়ারল্যান্ডের জেনেভায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কাল্লাসের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির প্রতিনিধিরা। তার পরেই তাঁরা ইরানের বিদেশমন্ত্রী আরাকচির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন। ইজ়রায়েল-ইরানের মধ্যে সংঘাতের আবহে সক্রিয় হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জার্মান প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তিন দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে ইরানের যে বৈঠক হতে চলেছে, তাতে সহযোগিতায় রয়েছে আমেরিকাও। বৈঠকের উদ্দেশ্য হল, ইরানের থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নাগরিকদের স্বার্থ ছাড়া আর কোনও কাজে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে না, ইরানের থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি। জার্মানির প্রশাসনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। ওই সূত্রই বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওই মহাদেশের তিন দেশের সঙ্গে ইরানের বৈঠকের পরে বিশেষজ্ঞ স্তরে আলোচনা হতে পারে। পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ করা নিয়ে প্রতিশ্রুতি শুধু খাতায়-কলমে নয়, যাতে কার্যকরও করা হয়, বৈঠকে সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

আইএইএ-কে দুষছে ইরান

রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে সরাসরি দুষেছে ইরান। প্রশ্ন তুলল আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসির ভূমিকা নিয়েও। বৃহস্পতিবার ইরানের বিদেশ মন্ত্রক অভিযোগ তুলেছে, ইজ়রায়েলের ‘অন্যায় আক্রমণে’ প্রশ্রয় দিয়েছে ওই সংস্থা। শুধু তা-ই নয়, বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রিত সংস্থাকেই দায়ী করেছে ইরান। বৃহস্পতিবার ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রসিকে উদ্দেশ্য করে নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘ইজ়রায়েল যে অন্যায় আক্রমণ চালাচ্ছে, তাতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন আপনি।’’ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রসি জানান, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে, এর সপক্ষে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বাঘেই বলেন, “অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বিভ্রান্তিকর বর্ণনার পরিণতিও ভয়াবহ হয়। আপনাকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। আপনি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আপনি এই অন্যায় যুদ্ধে আইএইএ-কেও শামিল করেছেন।” বাঘেইয়ের দাবি, আইএইএ-ই প্রথম বলেছিল ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু বিধি লঙ্ঘন করছে। সেই বক্তব্যের পরেই ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায় ইজ়রায়েল। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের নেপথ্য কারণও পরমাণু শক্তি নিয়ে জল্পনা। তাঁর দাবি, যুদ্ধ বাধার পরে এখন উল্টো পথে হাঁটছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা। একই সুর ইরানের পরমাণু শক্তি দফতরের প্রধান মহম্মদ এসলামির গলাতেও। বুধবার তিনিও ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে গ্রসির ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন।

Donald Trump Vladimir Putin Iran israel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy