Advertisement
E-Paper

চিন বাদ, নেপালের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী তালিকায় ঢুকল ভারত

নেপাল নিয়ে টানাপড়েনে চিনকে আবার পিছনে ফেলল ভারত। পাহাড়ি দেশটার সেরা উন্নয়ন সহযোগীদের তালিকায় ফের অন্তর্ভুক্ত হল ভারতের নাম। বাদ পড়ে গেল চিন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১৭:০৬
গত কয়েক বছরের টানাপড়েন কাটিয়ে ফের উষ্ণতা ফিরে পেয়েছে ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। —ফাইল চিত্র।

গত কয়েক বছরের টানাপড়েন কাটিয়ে ফের উষ্ণতা ফিরে পেয়েছে ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। —ফাইল চিত্র।

নেপাল নিয়ে টানাপড়েনে চিনকে আবার পিছনে ফেলল ভারত। পাহাড়ি দেশটার সেরা উন্নয়ন সহযোগীদের তালিকায় ফের অন্তর্ভুক্ত হল ভারতের নাম। বাদ পড়ে গেল চিন। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে চিনের সঙ্গে ভারতের স্নায়ুর লড়াই যে ভাবে তুঙ্গে, তার প্রেক্ষিতে নেপালের মতো কৌশলগত এবং অবস্থানগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ বেজিংকে বাদ দিয়ে নয়াদিল্লিকে নিজেদের সহযোগী ঘোষণা করায় স্বাভাবিক ভাবেই কূটনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে।

২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে কোন কোন দেশ নেপালের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে, তার তালিকা প্রকাশ করেছে নেপালের অর্থ মন্ত্রক। এই তালিকায় প্রতি বছর পাঁচটি দেশের নাম থাকে। ভারতের নাম এ বার পঞ্চম স্থানে রয়েছে। প্রথম স্থানে আমেরিকা, দ্বিতীয় ব্রিটেন, তৃতীয় জাপান, চতুর্থ সুইৎজারল্যান্ড।

নেপালের প্রকাশ করা সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ভারত নেপালের উন্নয়নে ৩ কোটি ৫৭ লক্ষ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করেছে। নিজেদের উন্নয়নের জন্য অন্যান্য দেশের কাছ থেকে নেপাল ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে যে পরিমাণ অর্থসাহায্য পেয়েছে, ভারত তার ৩.৩৩ শতাংশ দিয়েছে। আমেরিকার কাছ থেকে প্রায় ১২ কোটি ডলার, ব্রিটেনের কাছ থেকে প্রায় ৯ কোটি ডলার, জাপানের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার এবং সুইৎজারল্যান্ডের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার পেয়েছে নেপাল।

২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ভারত নেপালের এই উন্নয়ন সহযোগী তালিকা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে সেই আমেরিকা, ব্রিটেন আর জাপানই ছিল। চতুর্থ স্থানে ঢুকে পড়েছিল চিন। পঞ্চম স্থানে ছিল সুইৎজারল্যান্ড। নেপালের সেরা উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলির তালিকা থেকে ভারতের নাম বাদ পড়ায় সাউথ ব্লক কিন্তু সে বছর বেশ আশ্চর্যই হয়েছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বার ভারতের নাম বাদ পড়েছিল ওই তালিকা থেকে। কিন্তু ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের দাবি ছিল, নেপাল ভুল হিসেব প্রকাশ করেছে। ভারতের দেওয়া যে অর্থ নেপালের কোষাগারের মাধ্যমে সরাসরি খরচ হয়েছিল, শুধু সেই অর্থের হিসেবই নেপাল দেখিয়েছে। তার বাইরেও বিপুল অঙ্কের টাকা ভারত নেপালের জন্য খরচ করেছিল, ভূকম্প-বিধ্বস্ত নেপালের পুনর্গঠনে প্রচুর টাকা ঢালা হয়েছিল। সে সবের অনেকটাই হিসেবের মধ্যে ধরা হয়নি। সে কারণে ভারতকে টপকে চিন নেপালের সেরা সহযোগীর তালিকায় ঢুকে পড়েছিল বলে নয়াদিল্লি সে বছর জানিয়েছিল। এক বছর কাটতে না কাটতেই চাকা কিন্তু ফের ঘুরে গিয়েছে। চিন এক বছরের মাথাতেই বাদ পড়ে গিয়েছে নেপালের সেরা সহযোগী দেশগুলির তালিকা থেকে। আর ভারত তার স্থান ফিরে পেয়েছে।

গত মাসেই ভারত সফরে এসেছিলেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী। তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। —ফাইল চিত্র।

উন্নয়নে সরাসরি সহযোগিতা ছাড়াও আরও একটি ক্ষেত্রে ভারত নেপালকে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করেছে বলে সে দেশের অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে। প্রশিক্ষণ ও ছাত্রবৃত্তি দিয়ে এবং শিক্ষামূলক ভ্রমণ আয়োজন করে নেপালকে ভারত বিপুল পরিমাণ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে বলে কাঠমান্ডু জানিয়েছে। তবে কারিগরি সহায়তাকারীদের তালিকায় ভারতের পাশাপাশি চিন এবং কোরিয়ার নামও রয়েছে।

আরও পড়ুন: কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত আন্তর্জাতিক আদালতে

গোটা নেপালেরই অবস্থান হিমালয়ের উপরে। চার পাশে শুধুই স্থলভাগ, সমুদ্রের সঙ্গে যোগই নেই ছোট্ট আয়তাকার দেশটার। কিন্তু এ হেন নেপাল তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কৌশলগত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর দুই বৃহৎ শক্তির অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়। ভারত এবং চিন নামক সেই দুই বড় শক্তির মধ্যে বিবাদও রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে। সীমান্ত সমস্যা সে সব বিবাদের অন্যতম। সেই বিবাদের জেরে সীমান্তে সামরিক তৎপরতাও মাঝেমধ্যেই বৃদ্ধি পায়। এ হেন দু’টি দেশের ঠিক মাঝখানে অবস্থান নেপালের। ভারত এবং চিন নিজেদের সীমান্তে সামরিক পরিকাঠামো দ্রুত বাড়াচ্ছে। নেপাল, ভুটানের মতো দেশগুলিতে ভারত এবং চিন নিজেদের প্রভাব বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই লড়াইয়ে যে এগিয়ে থাকবে, স্বাভাবিক ভাবেই তার অবস্থান কিছুটা সুবিধাজনক হবে। তাই চিনকে ছেঁটে ফেলে ফের নেপালের সেরা উন্নয়ন সহযোগীর তালিকায় ঢুকে পড়তে পারা ভারতের বড় কূটনৈতিক সাফল্য। বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।

একই কারণে ভারতের আর এক প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় গত কয়েক বছর ধরে চিন নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চিনের অবস্থান শ্রীলঙ্কাতেও নড়বড়ে হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা ভারতের দিকেই ঝুঁকে। ঘটনাচক্রে কয়েক দিনের মধ্যেই শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দক্ষিণ এশিয়ার সমীকরণ নির্ধারণে মোদীর এই শ্রীলঙ্কা সফরও গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

Nepal India-Nepal Development Partner China International Affairs
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy