Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

ভারতীয় নৌসেনাকে হাত মিলিয়ে কাজ করার ডাক চিনা সামরিক কর্তার

ভারতীয় নৌসেনাকে যৌথ ভাবে কাজ করার আহ্বান জানাল চিন। ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তার স্বার্থেই দুই বৃহৎ নৌসেনার একসঙ্গে কাজ করা উচিত বলে চিনা নৌসেনার কর্তা মন্তব্য করলেন।

ভারত মহাসাগরের বুকে নিজেদের দাপট বাড়াতে হলে ভারতকে যে সঙ্গে পাওয়া দরকার, তা চিনা নৌসেনা বুঝতে শুরু করেছে। —ফাইল চিত্র।

ভারত মহাসাগরের বুকে নিজেদের দাপট বাড়াতে হলে ভারতকে যে সঙ্গে পাওয়া দরকার, তা চিনা নৌসেনা বুঝতে শুরু করেছে। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ঝাংচিয়ান (চিন) শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ১৯:৫০
Share: Save:

দুই প্রতিবেশী তথা দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে প্রবল টানাপড়েন চলছে ডোকলামকে কেন্দ্র করে। রোজ ভারতকে যুদ্ধের হুঙ্কার শোনাচ্ছে চিন। কিন্তু তার মধ্যেই চিনা সশস্ত্র বাহিনীর পদস্থ কর্তা সরকারি কর্মসূচির মঞ্চ থেকে সামরিক জোটে আহ্বান জানালেন ভারতকে। দক্ষিণ-পূর্ব চিনের ঝানচিয়াং নৌঘাঁটিতে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে চিনা নৌসেনার সাউথ সি ফ্লিটের জেনারেল অফিসের ডেপুটি চিফ লিয়াং তিয়ানচুন বললেন, ‘‘ভারত মহাসাগরের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য চিন এবং ভারত যৌথ ভাবে কাজ করতে পারে বলে আমার মত।’’ ভারত এবং চিনের মধ্যে প্রায় আড়াই মাস ধরে চলতে থাকা টানাপড়েনের মধ্যে চিনা সশস্ত্র বাহিনীর তরফ থেকে ভারতের প্রতি এই রকম আহ্বান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।

চিন সফররত ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শুক্রবার ঝানচিয়াং নৌঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিনা নৌসেনার সাউথ সি ফ্লিটের নিয়ন্ত্রণাধীন এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটিতে এই প্রথম বার ভারতীয় সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হল। সেখানেই ক্যাপ্টেন তিয়ানচুন ভারতীয় সাংবাদিকদের জানালেন যে ভারতীয় নৌসেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে আগ্রহী চিনের নৌসেনা পিএলএ নেভি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচাপরিতায় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি এবং সুস্থিতি বজায় রাখার উপরে জোর দেন চিনা নৌসেনার আধিকারিক। এই সুবিশাল অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগী হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভারত এবং চিনের নৌসেনা যৌথ ভাবে কাজ করলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল যথেষ্ট সুরক্ষিত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভারতীয় এবং মার্কিন নৌসেনা যত দিন হাত মিলিয়ে কাজ করবে, তত দিন কিছুতেই ভারত মহাসাগরের বুকে দাপট বাড়াতে পারবে না চিন। বেজিং সে কথা ভালই বুঝতে পারছে। ছবি: এএফপি।

ভারতীয় নৌসেনার ক্রমবর্ধমান শক্তি, গোটা ভারত মহাসাগর জুড়ে ভারত-জাপান-আমেরিকা অক্ষের বাড়তে থাকা দাপট এবং এশীয় জলভাগে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করার তাগিদ— এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই চিনের সামরিক বাহিনী এই বার্তা দিচ্ছে বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। চিনের সরকার ভারতের সরকারকে সামরিক জোটের বার্তা দিয়েছে, এমন কিন্তু নয়। চিনা সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্তার মাধ্যমে বার্তাটা দেওয়া হয়েছে। সরাসরি ভারত সরকারকে দেওয়া হয়নি, সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে নয়াদিল্লির কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু গোটা বিষয়টি যে ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে ভারত মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর তাগিদেই ভারতীয় নৌসেনাকে পাশে চাইছে চিন।

আরও পড়ুন: ১৪ মিনিটে গুয়ামে আঘাত হানতে পারে কিমের ক্ষেপণাস্ত্র: আমেরিকা

অনেক দিন ধরেই ভারত মহাসাগরে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে চিন। দক্ষিণ চিন সাগরের বুকে কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সেখানে তারা সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে। মলদ্বীপ, মায়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানে চিন বন্দর গড়ছে বা গড়ে ফেলেছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পশ্চিমতম প্রান্তে অবস্থিত জিবুটিতে চিন সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে। গোটা ভারত মহাসাগর জুড়ে একের পর এক বন্দর তৈরি করার এই চিনা নীতিকে ভারত ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ নীতি নামে ডাকে। ভারতকে সব দিক থেকে ঘিরে ফেলার জন্যই চিন বিভিন্ন দেশে এ ভাবে একের পর এক বন্দর তৈরি করছে বলে ভারত মনে করে।

আরও পড়ুন: অনড় চিন, ভারতের চাপে সক্রিয় ভুটান

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সুবিশাল জলভাগে চিনের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো একমাত্র শক্তি ভারতীয় নৌসেনাই। সেই কারণেই ভারতকে সব দিক দিয়ে ঘিরে ভারতীয় নৌসেনাকে চাপে রাখতে চায় চিন। কিন্তু গত কয়েক বছরে গোটা ভারত মহাসাগর জুড়ে ভারত, জাপান, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার নৌসেনা যে ভাবে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করতে শুরু করেছে, তাতে চিনের প্রভাব খর্ব হচ্ছে। ভারতকে মার্কিন জোট থেকে সরিয়ে আনতে পারলেই ফের প্রভাব বাড়াতে পারবে চিন, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণেই ভারতীয় নৌসেনাকে যৌথ ভাবে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে চিনা নৌসেনা। মত সমর বিশারদদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE