Advertisement
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
জামায়াতে জঙ্গি ছিনতাইয়ে হামলা
Bangladesh Unrest

আগেই হামলার ছক করেছিল আইএসআই

কেন্দ্রীয় সংস্থার মতে, কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে, একাত্তরের পরাজয়কে মাথায় রেখে ঝাঁপিয়েছিল পাকিস্তান। অন্য দেশের আর্থিক সহায়তায় আইএসআই সুনির্দিষ্ট ছক কষে এই হামলার পরিকল্পনা করে।

শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৪ ০৯:১০
Share: Save:

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগে থেকেই পরিকল্পিত ভাবে সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ শুরু করেছিল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রশিক্ষিত ক্যাডারবাহিনী মিশে ছিল বলে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর, ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নরসিংদী-সহ বিভিন্ন জেলে হামলা করা হয় জামায়াতের জঙ্গিদের উদ্ধার করার জন্য। নরসিংদী, শেরপুর, সাতক্ষীরা-সহ বিভিন্ন কারাগারে হামলা চলে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, সেই হামলার পরে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়। মূল ঢাকা শহরে সে ভাবে সামনে না এলেও জামায়াতে জঙ্গিরা মূলত তাণ্ডব চালিয়েছে গ্রাম এবং মফস‌্সলে।

কেন্দ্রীয় সংস্থার মতে, কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে, একাত্তরের পরাজয়কে মাথায় রেখে ঝাঁপিয়েছিল পাকিস্তান। অন্য দেশের আর্থিক সহায়তায় আইএসআই সুনির্দিষ্ট ছক কষে এই হামলার পরিকল্পনা করে। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোটা প্রত্যাহারের দাবিতে শুরু হলেও পরে ভারত-বিদ্বেষ, লুটতরাজ, হিন্দু পীড়নের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। পুলিশকর্মীরাও আক্রান্ত হন মৌলবাদীদের হিংসায়। আর সেই হিংসা প্রতিহত করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর থেকে পুরোমাত্রায় সাহায্য শেখ হাসিনা পাননি বলেই অনুমান ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের।

জানা গিয়েছে, আইএসআই-এর প্রশিক্ষিত বাহিনী তো ছিলই। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় কারাগার থেকে ছিনিয়ে আনা জঙ্গি মৌলবাদীরা। ২৩ জুলাই নরসিংদী জেলা করাগার থেকে ৯ জন কট্টর জঙ্গি-সহ ৮২৬ জন কারাবন্দিকে ছিনতাই করা হয় বলে খবর। জেলখানার অস্ত্রাগার থেকে লুট হয়েছে ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, আট হাজার গুলি। সেখানকার নথিপত্রও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নরসিংদী জেলখানার সঙ্গে এই আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক ছিল না, শুধুমাত্র জঙ্গিদের ছিনতাই করতেই এই হামলা করা হয় বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, জেলের থেকে লুট করা অস্ত্র সংখ্যালঘুদের উপর হামলায় কাজে লাগানো হয়েছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু করতে পারেননি। কারণ, তাঁর নির্দেশ অমান্য করা হয়।

শেরপুরে দিনের বেলাতেই হামলা হয় জেলখানায়। পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে লাঠি, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শহরে মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা জেলখানায় হামলা চালায়। ছাত্র-জনতার মিছিলের একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা দমদমা-কালীগঞ্জ এলাকায় জেলা কারাগারের গেট ভেঙে, আগুন লাগিয়ে প্রায় ৫০০ বন্দিকে পালাতে সাহায্য করে বলে খবর। বেলা ১টায় সদর থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকেও বন্দিদের ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে বলে পুলিশ স্বীকারও করেছে। জানা গিয়েছে, জেল পাহারা দেওয়ার ভার তখন ছিল সেনাবাহিনীর হাতে। তাদের সামনেই জেলখানায় বার বার হামলা হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কট্টর জঙ্গিরা ছাত্রদের ভিড়ে মিশে গিয়ে অশান্তির মূল কারিগর হয়ে ওঠে। আসলে তালিবানের মতো বাংলাদেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে জামায়াতের নেতৃত্বে মৌলবাদী শক্তিগুলি। তাই ভাঙা হয়েছে ভাস্কর্য। হিন্দুদের দেশছাড়া করার চেষ্টাও শুরু হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তবে এটাও তাঁরা বলছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই আয়ত্তে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস হিংসা, অত্যাচার থামানোর জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে তার মানে এই নয়, ভবিষ্যতে আবার হামলা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE