বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। শুধু রাজধানী নয়, প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে সে দেশের অন্য অংশেও। জীবনযাত্রায় ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, বৈষম্য-সহ নানা কারণে অসন্তোষ নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ যেমন চলছে, তেমনই দিকে দিকে লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। বাদ পড়লেন না সে দেশের অর্থমন্ত্রীও। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রীর বাড়ি লুট করেন বি-ক্ষোভকারীদের একাংশ। শুধু অর্থমন্ত্রী নন, দেশের অনেক আইনপ্রণেতার বাড়িতেও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে। চলমান এই বিক্ষোভের জেরে চিন সফর বাতিল করলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবয়ো সুবিয়ান্তো।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘কোমপাস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিবার সকালে ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী মুলয়ানি ইন্দ্রাবতীর বাড়িতে ঢুকে পড়ে এক দল বিক্ষোভকারী। সেই বাড়ি লুট করার মতলব ছিল। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় বাধা পায় তারা। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ। মুলয়ানি ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার আরও তিন আইনপ্রণেতার বাড়িতে হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। তবে লুটপাটের বিষয়টি সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
কী কারণে বিক্ষোভ? আইনপ্রণেতারা আবাসন ভাতা হিসাবে যা পান, তা দেশের মাসিক ন্যূনতম বেতনের ১০ গুণ বেশি। কেন এই বৈষম্য, সেই প্রশ্নকে সামনে রেখে বিক্ষোভের সূত্রপাত। তার পর একে একে জুড়তে থাকে করবৃদ্ধি, ছাঁটাই, মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়গুলিও। এই নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে ইন্দোনেশিয়ায় সমাবেশ, বিক্ষোভ চলছে। সম্প্রতি তেমনই এক সমাবেশ চলাকালীন পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় আফফান নামে এক তরুণের। সেই মৃত্যুর ঘটনা বিক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতির মতো কাজ করে। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ।
আরও পড়ুন:
শনিবার দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেন প্রাবয়ো। তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়ায় কোনও অরাজকতার জায়গা নেই। যাঁরা এই সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশও দেন প্রাবয়ো। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের তরফে একটি ভিডিয়োবার্তা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘দেশের পরিস্থিতির দিতে নজর রাখছেন প্রেসিডেন্ট। কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেটাই এখন বিবেচনা করছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর চিনে যাওয়ার সম্ভব নয়। আমন্ত্রণ রাখতে না-পারায় চিন সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট।’’
জাকার্তা ছাড়াও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সুরাবায়া, বান্দুং, সুরাকার্তা, মেদান, বালির মতো শহরে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিক্ষোভ দমন করতে বালিতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে পুলিশকে। দেশের দিকে দিকে পুলিশের বিরুদ্ধে পথে নামছেন আন্দোলনকারীরা। আফফানের মৃত্যুর জন্য দায়ী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবি জোরদার হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ায়।