আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিতে চায় ইরান। পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। তবে তেহরানের শর্ত, ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে আমেরিকাকে। শুধু তা-ই নয়, ইউরোপীয় দেশগুলিকেও একাধিক বার্তা দিয়েছে তেহরান।
গত এপ্রিল থেকেই আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। সোমবার ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাকিয়ে বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যকর ভাবে প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি চাই আমরা।’’ যদিও এই ব্যাপারে আমেরিকার তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সম্প্রতি তেহরান জানিয়েছিল, আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি স্থগিত করবে না ইরান। পশ্চিম এশিয়ার দেশ ওমানের মধ্যস্থতায় ইটালির রাজধানী রোমে পঞ্চম দফার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল। তার পরেই এমন বার্তা দেয় ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েশকিয়ান এ-ও বলেন, ‘‘পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা যদি কোনও চুক্তিতে পৌঁছোতে ব্যর্থ হয়, তা হলেও ইরান টিকে থাকতে পারবে।’’ তিনি বোঝাতে চান যে, পরমাণু চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে যদি আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যদি নিশেধাজ্ঞা জারি করে, তবে ইরানের খুব একটা ক্ষতি হবে না। মাসুদের সেই বার্তার পর এ বার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কিছু সুর চড়াল ইরান। পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় ‘গ্যারান্টি’ চায় তারা।
আরও পড়ুন:
২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। চুক্তির নাম ছিল ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ)। তাতে স্থির হয়, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা বন্ধ রাখলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা এবং অন্য কয়েকটি দেশ। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্প জানান, এই পরমাণু চুক্তি ওবামার ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের। ২০১৮ সালে তাঁর নির্দেশে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসে আমেরিকা। তবে দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আবার ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে তৎপর হন ট্রাম্প।