আমেরিকার গালে জোরে থাপ্পড় মেরেছে ইরান! বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে এমনটাই দাবি করলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। ইজ়রায়েল-ইরান সংঘর্ষবিরতির পরে এই প্রথম প্রকাশ্য বার্তা দিলেন খামেনেই।
গত মঙ্গলবার পশ্চিম এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হয়েছে। কিন্তু খামেনেইয়ের কোনও বার্তা আসছিল না। সমাজমাধ্যমের পাতাতেও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার কোনও ‘খোঁজ’ পাওয়া যাচ্ছিল না। তা নিয়ে বিভিন্ন জল্পনাও দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। অবশেষে ‘খোঁজ’ মিলল খামেনেইয়ের।
সংঘর্ষবিরতির পরে প্রথম বার্তায় ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ জয়ে’র জন্য ইরানবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “এত হইচই করে, এত দাবি করার পরেও ইহুদি সরকার (ইজ়রায়েল) কার্যত ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের (ইরান) হামলায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।”
শুধু ইজ়রায়েল নয়, আমেরিকার বিরুদ্ধেও ‘জয়ে’র জন্য ইরানবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন খামেনেই। তাঁর দাবি, আমেরিকা ধরেই নিয়েছিল মার্কিন বাহিনী এই যুদ্ধে প্রবেশ না করলে ইজ়রায়েল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই কারণেই আমেরিকা এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সমাজমাধ্যমে খামেনেইয়ের বক্তব্য, ইজ়রায়েলকে বাঁচাতে আমেরিকা এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেও আসলে কিছুই করে উঠতে পারেনি। তিনি লেখেন, “আমেরিকার গালে জোরে থাপ্পড় মেরেছে ইরান। আল উদেইদে আমেরিকা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে (ইরান) আক্রমণ করেছে এবং সেখানে ক্ষতিও করেছে।”
বস্তুত, ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্র, ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহানে আকাশপথে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকার বায়ুসেনা। তার পর থেকেই আমেরিকাকে টানা হুঙ্কার দিয়ে আসছিল তেহরান। পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার ঘাঁটিগুলি যে আর নিরাপদ নয়, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা। শুধু হুঙ্কার দিয়েই থামেনি ইরান, হামলাও করেছে মার্কিন ঘাঁটিতে। কাতারের রাজধানী দোহার কাছে আল উদেইদে আমেরিকার বায়ুসেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় তেহরান। যদিও ট্রাম্পের দাবি, খুবই ‘দুর্বল’ হামলা ছিল এবং কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘটনাচক্রে, মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পাঁচ ঘণ্টা পরে সেই রাতেই ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:
খামেনেই বলেন, “ইরানের শত্রুরা ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু কর্মসূচির কথা শুধুমাত্র অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে। কিন্তু ওরা আসলে চায় ইরান আত্মসমর্পণ করুক। ট্রাম্প একটি বক্তৃতায় দাবি করেছেন, ইরানের আত্মসমর্পণ করা উচিত। তিনি অনেক বড় কিছু চেয়ে ফেলেছেন। ট্রাম্প সত্যিটা বুঝিয়ে দিয়েছেন— ইরান আত্মসমর্পণ করলে তবেই আমেরিকা ক্ষান্ত হবে। কিন্তু আমরা কখনও আত্মসমর্পণ করব না। আমরা এক শক্তিশালী রাষ্ট্র।”
বৃহস্পতিবার একটি ভিডিয়োবার্তায় ফের আমেরিকাকে সতর্ক করে দিয়েছেন খামেনেই। আবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলি নিরাপদ নয়। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলি পর্যন্ত পৌঁছোনোর ক্ষমতা রয়েছে ইরানের। ভবিষ্যতে ইরানের উপর আবার হামলা হলে তেহরান ফের মার্কিন ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালাবে বলেও সতর্ক করে রেখেছেন তিনি। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা জানিয়ে দিয়েছেন, তেহরানের উপর ফের হামলা হলে তার মূল্য চোকাতে হবে।