Advertisement
E-Paper

সিরিয়ার আইএস জঙ্গি সিদ্ধার্থ বাঙালির ছেলে?

অচেনা বধ্যভূমি। পাঁচ ব্রিটিশ ‘চর’ নতজানু হয়ে বসে রয়েছেন। তাঁদের দোষ কবুলের পরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে একের পর এক গুলি। মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে রক্তাক্ত শরীরগুলি। আইএস-এর সাম্প্রতিক এই ভিডিও-য় তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা দুনিয়া জুড়ে। তবে, তার থেকেও বেশি তোলপাড় ওই হত্যাকারীদের মধ্যে থাকা এক আইএস জঙ্গিকে নিয়ে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৩

অচেনা বধ্যভূমি। পাঁচ ব্রিটিশ ‘চর’ নতজানু হয়ে বসে রয়েছেন। তাঁদের দোষ কবুলের পরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে একের পর এক গুলি। মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে রক্তাক্ত শরীরগুলি। আইএস-এর সাম্প্রতিক এই ভিডিও-য় তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা দুনিয়া জুড়ে। তবে, তার থেকেও বেশি তোলপাড় ওই হত্যাকারীদের মধ্যে থাকা এক আইএস জঙ্গিকে নিয়ে।

গত কাল থেকে সোশ্যাল সাইটগুলিতে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওই উস্কে দিয়েছে খুনি আইএসের সঙ্গে ভারত, এমনকী এই বাংলার যোগাযোগের সম্ভাবনা। ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের মতে, মুখোশের আড়ালে যে মুখটি রয়েছে সেটি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সিদ্ধার্থ ধরের। ‘ধর’ পদবী বাঙালিদের মধ্যে শোনা যায়। আর উচ্চারণটা যদি ‘ধার’ হয়, তা হলে কাশ্মীরি পণ্ডিত হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দাদের দাবি, সিদ্ধার্থের পূর্বপুরুষ আদতে বাংলা-বিহার লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ছোটবেলায় মা-বাবা এবং দুই বোনের সঙ্গে লন্ডনে চলে এসেছিল সিদ্ধার্থ। সেখানেই তার বড় হওয়া। এবং ধর্মান্তরিত হয়ে পরিণত হওয়া কট্টরপন্থী মুসলিমে। ৩২ বছর বয়সী সিদ্ধার্থের নাম এখন আবু রুমায়েশ। তার বঙ্গতনয় হওয়ার সম্ভাবনা অতএব যথেষ্ট।

বেশ কিছু দিন ধরেই ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের নজরে ছিল সিদ্ধার্থ। পরে জেহাদি হিসেবে ২০১৪ সালে ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে যদিও জামিন পেয়ে যায় সে। আর তার পরেই সিরিয়া চলে যায় সিদ্ধার্থ। আইএস-এর সাম্প্রতিক ভিডিওটি ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হাতে আসার পর থেকে তাঁরা সেটি খুঁটিয়ে দেখা শুরু করেন। ভিডিও-য় খাঁটি ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলা জঙ্গির কথাবার্তা বেশ কয়েক বার পরীক্ষা করে দেখা হয়। পুরনো তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের ধারণা হয়, ওই কণ্ঠস্বর সিদ্ধার্থের।

এই সংক্রান্ত আরও খবর
ঘাড়ে নিশ্বাস এ বার, আইএস এখানে অপারেশনে নামছে?

আরও দেখুন: আইএস ঘাতক সিদ্ধার্থ

সূত্রের খবর, এর পর সিদ্ধার্থের বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গোয়েন্দারা। তার বোন কণিকা ধরকে শোনানো হয় ওই ভিডিও-র অডিও অংশ। অডিও শুনে নিজের দাদার কণ্ঠস্বর চিনতে পারেন কণিকা। কিন্তু, পরে ভিডিও দেখার পর স্তম্ভিত হয়ে যান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে আমাকে অডিও শোনানো হয়। আমি বুঝতে পারি ওটা দাদার গলা। কিন্তু, ভিডিও ক্লিপ দেখে আমি ধন্দে পড়ে যাই। তাই এখন পুরোটা নিশ্চিত নই।’’ আইএস জঙ্গি সংগঠনের একটা অংশও মেনে নিয়েছে, ওটা সিদ্ধার্থ ধরই। তদন্তের স্বার্থে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা প্রকাশ্যে যদিও কিছু বলতে চাইছেন না। তবে তাঁদের একটা অংশের দাবি, বছর দশেক আগে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান ধর্ম নিয়েছে সে। সিদ্ধার্থের বর্তমান নাম আবু রুমায়শা।

১০ মিনিটের ওই ভিডিও-য় কালো মুখোশে মুখ ঢাকা ওই ব্যক্তিকে খাঁটি ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলতে শোনা গিয়েছে। তার সামনে নতজানু হয়ে বসে রয়েছেন পাঁচ ব্রিটিশ নাগরিক। আইএস-এর পুরনো ভিডিওগুলিতে যেমন দেখা গিয়েছিল, তেমনই কমলা রঙের পোশাক তাঁদের পরনে। তাঁরা যে ব্রিটিশ সেনার ‘চর’, সে কথা তাদের দিয়ে কবুল করিয়ে নেওয়ার পরই ‘আল্লা হো আকবর’ ঘোষণা। তার পরই সিদ্ধার্থ-সহ পাঁচ জঙ্গি পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে নিরস্ত্র ওই পাঁচ ‘বন্দি’কে গুলি করে খুন করে।

ওই ভিডিওতে সিদ্ধার্থ ধর ডেভিড ক্যামেরনকে যথেচ্ছ হুমকি দেয়। এমনকী, ব্রিটেন দখল করার হুমকিও দেওয়া হয়। ভিডিওতে সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘আমরা জেহাদেই বিশ্বাস রাখব। ব্রিটেন দখল আমরা করবোই। তার পর শরিয়ত মেনে শাসন করব।’’ তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘বোকা’, ‘হোয়াইট হাউসের চাকর’, ‘খচ্চর’— এমন নানা শব্দও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই ভিডিও সম্পর্কে ক্যামেরনের মন্তব্য, ‘‘ভয়ঙ্কর ভিডিও! ওই জঙ্গি সংগঠন নিজেদের এলাকা হারাচ্ছে। মানুষের সহানুভূতি হারাচ্ছে। হারাচ্ছে পায়ের তলার মাটিও।’’

ভিডিও-র শেষ যদিও এক শিশুকে দিয়ে। সেনা পোশাক পরা বছর দশেকের ওই নাবালক। গাট্টাগোট্টা চেহারা, মাথাভর্তি তার কোঁকড়ানো চুল। মাথায় কালো ফেট্টি বাঁধা। যার মাঝে সাদা গোলাকার চাকতিতে আইএস-এর লোগো। আঙুল উঁচিয়ে সে ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরেজিতে বলছে, ‘‘ওখানে আমরা কাফেরদের হত্যা করছি।’’

জঙ্গির কণ্ঠস্বরের সঙ্গে ভাইয়ের মিল পেয়েছেন কণিকা। তবু নৃশংস ভিডিও দেখে মানতে পারছেন না, ভাই-ই নয়া ‘জেহাদি জন’। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, আইএসের হয়ে বহু প্রচারের কাজ করেছে সিদ্ধার্থ। আইএস শাসনাধীন এলাকায় পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যে আস্ত পুস্তিকাও লেখে সে। ‘খলিফার রাজ্য’কে ভূমধ্যসাগরের পারে বিলাসবহুল রিসর্টগুলির সঙ্গে তুলনা করে বলে, পর্যটকেরা সেখানে উৎকৃষ্ট চকলেট এবং কফি পাবেন। কিন্তু খুন করার ভিডিও-য় এর আগে সিদ্ধার্থকে দেখা গিয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না গোয়েন্দারা। এই প্রথম এক ভারতীয়কে আইএস ঘাতকের ভূমিকায় দেখা গেল বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের ধারণা, ভিডিওটি সিরিয়ার রাকা শহরে তোলা।

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy