তিন দিন লাগাতার আলোচনার পরে অবশেষে শান্তিচুক্তিতে সম্মত হল ইজ়রায়েল এবং হামাস। বৃহস্পতিবার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে খবরটি জানান। কিছু ক্ষণের মধ্যে সেই দাবিতে সিলমোহর দিল ইজ়রায়েল সরকারও। ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতরের তরফে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফার শান্তিপ্রস্তাব অনুযায়ী প্রথম দফার শান্তিচুক্তিতে রাজি হয়েছে দু’পক্ষ। তবে ইজ়রায়েলি মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেই চুক্তিটি কার্যকর হবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শর্ত মেনে শুরু হবে বন্দি বিনিময়। হামাসের হাতে পণবন্দি ২০ জনের মুক্তির বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার প্যালেস্টাইনিকে মুক্তি দেবে ইজ়রায়েল। তাদের মধ্যে অন্তত ২৫০ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি। অন্য দিকে হামাস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজ়ায় যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফেরাতে তারা চুক্তিতে রাজি হয়েছে। ইহুদি দেশটি গাজ়ার কিছু অংশ থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। পরিবর্তে ইজ়রায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে হামাস। তবে কিছু বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এখনও বাকি। যেমন, আগামী দিনে গাজ়ার রাশ কার হাতে থাকবে, হামাসের ভবিষ্যৎ কী হবে— ইত্যাদি। এই ঘোষণার পরেই ট্রাম্পকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত সোমবার থেকে মিশরের রাজধানী কায়রোয় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আলোচনায় বসেছিল ইজ়রায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে যোগ দেন মিশর, কাতার এবং আমেরিকার দূত। প্রথম দিকে তেমন আশার আলো দেখা না গেলেও, চার দিনের মাথায় শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে সব পক্ষই। ইজ়রায়েল প্রশাসন সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্তের পরে ফোনে আবেগময় অভিনন্দন বিনিময় করেন নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্প। আগামী রবিবার, ১২ অক্টোবর ট্রাম্প জেরুসালেমে আসতে পারেন বলে সূত্রের খবর।
যুদ্ধবিরতির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ধাপে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। এর পিছনে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর শক্তিশালী নেতৃত্বও রয়েছে। আমরা আশাবাদী, সমস্ত পণবন্দিরা মুক্তি পাবে। একইসঙ্গে গাজ়ার মানুষ সমস্ত রকম সাহায্য পাবে।’’ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফ্রান্স, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, আরব দুনিয়ার বহু দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস বলেছেন, ‘‘আশা করি দু’পক্ষই সমস্ত শর্ত মেনে চলবে। খাবার, ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে আগামী তিন মাস গাজ়াবাসীকে সব রকম ভাবে সাহায্য করার জন্য আমরা তৈরি।’’
তবে এই সাফল্য একান্ত ভাবে ট্রাম্পের প্রাপ্য বলে মনে করছে হোয়াইট হাউস। তারা আজ ট্রাম্পের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’। আগামী কাল নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হতে চলেছে। আজকের সাফল্য কি ট্রাম্পকে সেই দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে? আজ হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে এই রকম একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘সে আমি জানি না। তবে মার্কো (আমেরিকান বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো) আপনাদের বলবেন, কী ভাবে আমরা সাত সাতটা যুদ্ধ থামিয়েছি। এ বার অষ্টম যুদ্ধ থামানোর দিকেও এগোলাম। আমার মনে হয়, রাশিয়ার যুদ্ধটাও আমরা থামাতে সফল হব। বিশ্বের ইতিহাসে আর কেউ এতগুলো যুদ্ধ থামিয়েছে বলে মনে হয় না।’’ পাকিস্তান-সহ বহু দেশই এ বছর ট্রাম্পকে শান্তির নোবেলের জন্য মনোনীত করেছে। তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের আশঙ্কা, ‘‘আমাকে পুরস্কার না দেওয়ার জন্য ওরা (নোবেল কমিটি) হয়তো কোনও ছুতো খুঁজে বার করবে।’’
শান্তিচুক্তির কথা ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে ভাসছেন গাজ়ার মানুষ। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন ইজ়রায়েলবাসীরাও। সমাজমাধ্যমে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের নানা ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে একই সঙ্গে গাজ়াবাসীর আশঙ্কা, যুদ্ধবিরতি আদৌ দীর্ঘস্থায়ী হবে তো? এত কিছুর মধ্যেও গাজ়ায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইজ়রায়েল। হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইজ়রায়েলি হানায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)