পাকিস্তানের মাটিতে ঘাঁটি গেঁড়েই ফের সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই মহম্মদ। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, পাকিস্তানের আরও ভিতরে, আফগানিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা খাইবার পাখতুনখোয়ায় নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে মার্কাজ়গুলি। এগুলিতে মূলত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জইশের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ঘাঁটি সরাচ্ছে হাফিজ সইদের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন-ও। আর এই সব কর্মকাণ্ডকে আড়াল করতে এবং অবাধে আর্থিক লেনদেন জারি রাখতে শীঘ্র নাম বদলাচ্ছে জইশ।
নতুন করে জঙ্গি নিয়োগও শুরু করে দিয়েছে জইশ। সূত্রের খবর, গত ১৪ সেপ্টেম্বর, দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের ৭ ঘণ্টা আগে, খাইবার পাখতুনখোয়ায় জঙ্গি নিয়োগ শিবিরের আয়োজন করেছিল তারা। যদিও বাইরে থেকে এই শিবিরকে ধর্মীয় জমায়েতের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের পাহারায় ছিলেন পাকিস্তানের সেনা আধিকারিক, সেনা ও পুলিশবাহিনী। সেই জমায়েতের ছড়িয়ে পড়া এক টুকরো ভিডিয়োয় মুখোশের আড়াল খুলে পড়েছে। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদীদের প্রত্যক্ষ মদত দিয়ে চলেছে, তা ফের প্রমাণিত হয়েছে। ওই ভিডিয়োয় মাসুদ-ঘনিষ্ঠ আর এক জইশ নেতা মাসুদ ইলিয়াস কাশ্মীরিকে উর্দুতে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এই দেশের সীমান্তকে রক্ষা করতে আমরা সন্ত্রাসকে বরণ করেছি। দিল্লি, কাবুল, কান্দাহারে লড়াই চালিয়েছি। তার জন্য কত না ত্যাগ স্বীকার করেছেন মাসুদ আজ়হার। আর তার বদলে ৭ মে ভারতীয় সেনার হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে মাসুদের পরিবার।’’
গত ৭ মে ‘সিঁদুর’ অভিযানে পাকিস্তানের আটটি জায়গায় জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। বাহাওয়ালপুরে জইশ-এর সদর দফতরে হামলার জেরে জইশ প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজ়হারের পরিবারের অন্তত ১০ জন নিহত হন। এর পর থেকে মাসুদকে তেমন ভাবে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। সে দিনের অভিযানে নিহত হন মাসুদের ভাই ইউসুফ আজ়হারও। সূত্রের খবর, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পেশোয়ারে ইউসুফের স্মরণে একটি সভার আয়োজন করা হবে। সেখানে জইশের নাম বদলে রাখা হবে অল-মুরাবিতুন। যার অর্থ ‘ইসলামের রক্ষাকারী’। পাকিস্তানে তারা এই নামে সক্রিয় থাকবে।
কেন এই নামবদল? একটি সূত্রের মতে, ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদে হামলা, ২৬/১১ মুম্বই হামলা, জম্মু-কাশ্মীরে উরি ও পুলওয়ামায় সেনার উপরে আক্রমণ— এ সবে নাম জড়ানোয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা নিষেধাজ্ঞা চেপেছে জইশের উপরে। ফলে আর্থিক অনুদান পেতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই নাম বদলের ভাবনা। সন্ত্রাসে আর্থিক মদত প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক নজরদার সংগঠন এফএটিএফ জুলাই মাসে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, ইদানীং ডিজ়িটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে জইশ। অন্তত ৫টি ই-ওয়ালেট এবং ইউপিআই সূত্র মিলেছে, যেগুলির মাধ্যমে জইশ এবং মাসুদের পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে। নতুন জইশের লক্ষ্য, অন্তত ৪০০ কোটি পাকিস্তানি টাকা জোগাড় করা। সেই অর্থ খরচ করে ৩০০টি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা মার্কাজ় বানানো হবে। এখন এই তহবিল সংগ্রহ যদি ডিজ়িটাল লেনদেনের মাধ্যমে ঘটে, তাহলে পাকিস্তান দেখাতে পারবে যে জইশের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ তাতে অর্থের যোগানেও বাধা থাকবে না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)