Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Joe Biden

Afganistan: ‘আমেরিকা সেনা ফিরিয়ে আনতই, কিন্তু এ ভাবে!’

ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে সোমবার অবশেষে মুখ খুলেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ভুল করিনি! হোয়াইট হাউসে জো বাইডেন। সোমবার।

ভুল করিনি! হোয়াইট হাউসে জো বাইডেন। সোমবার। রয়টার্স ।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪১
Share: Save:

আমেরিকা হয়তো ভেবেছিল, তারা সেনা সরালেও আফগানিস্তানে আরও কিছু দিন আশরফ গনি সরকারের কর্তৃত্ব কায়েম থাকবে। কিন্তু তার আগেই তালিবান শক্তি যে হুড়মুড়িয়ে কাবুল পর্যন্ত দখল করে নেবে, তা হয়তো তারা কল্পনা করে উঠতে পারেনি।

এপ্রিলের মাঝামাঝি সেনা সরানোর কথা ঘোষণা করেছিল জো বাইডেনের সরকার। আমেরিকা তার আগেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, যে সমস্ত স্থানীয় আফগান গত দু’দশক ধরে আমেরিকান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেছেন, তাঁদের নিরাপদে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের যা পরিস্থিতি তাতে তড়িঘড়ি আমেরিকা সেনা সরালেও ওই সমস্ত আফগানের কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। এঁদের অনেকে সেনা বা সদ্য প্রাক্তন সরকারের প্রশাসনে কাজ করেছেন। শুধু দোভাষী বা অনুবাদকের কাজ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। সেনা সরানোর কথা ঘোষণা করার এত দিন পরেও এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় জো বাইডেনের প্রশাসন কেন ফেলে রাখল তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেই ফিসফাস শুরু হয়েছে। সরকারের ‘গড়িমসিতে’ কার্যত ক্ষুব্ধ পেন্টাগনের একাংশ। প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ না-খুললেও আফগানিস্তানে বর্তমান অচলাবস্থার জন্য বাইডেন সরকারের প্রতিরক্ষা দফতরকেই দায়ী করছেন তাঁরা।

আফগানদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব ছিল প্রতিরক্ষা দফতরের হাতে। ক্ষুব্ধ সেনাকর্তাদের অভিযোগ, এপ্রিলে বাইডেন সরকারের ঘোষণার পরে সেনার পাশাপাশি আফগানদের সরাতে তৈরি ছিল পেন্টাগন। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল হচ্ছে বুঝেও দ্রুত পদক্ষেপ করেনি সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনাকর্তা বলেন, ‘‘আমেরিকা সেনা ফিরিয়ে আনতই, কিন্তু তাই বলে এ ভাবে! আমরা মাসের পর মাস ধরে সতর্ক করেছিলাম ওদের। তবু প্রতিরক্ষা দফতর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি। দীর্ঘমেয়াদি ভিসা অনুমোদন-সহ লাল ফিতের নানা নিয়ম নিষ্ঠা ভরে পালন করতে ব্যস্ত ছিল তারা। জুনের শেষে গিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝল হোয়াইট হাউস। তখন পেন্টাগনের সাহায্য চাইল। আজ আমার আর রাগ হচ্ছে না। খুব হতাশ লাগছে। অনেক সুষ্ঠু ভাবে, অন্য রকম ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত।’’ আর এক সেনা কর্তা হ্যাঙ্ক টেলর বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই বছরের পর বছর আফগানিস্তানে কাটিয়েছি। তাই বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ আমরা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারছি।’’

সরকারের গড়িমসি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সোমবার পেন্টাগনের ডিরেক্টর গ্যারি রেড বলেন, ‘‘প্রতিরক্ষা দফতর চাইলে তবেই আমরা এগোতে পারি। তাদের সাহায্য করতে পারি।’’

পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি আজ জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে দোভাষী ও অনুবাদক এবং তাঁদের পরিবার-সহ প্রায় ২২ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত মাত্র হাজার দু’য়েক শরণার্থীকে আনা গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। শেষ মুহূর্তে তাঁদের সাহায্যের জন্য ‘দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর’ খোলা হয়েছে। আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস অবশ্য বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে বুঝেই বিশেষ দফতর খোলা হয়েছে।’’

আফগান শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক আধিকারিকেরা। এই পরিস্থিতিতে আফগান শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে, তাঁদের ফিরিয়ে না-দিতে অন্যান্য দেশগুলিকে আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি। পূর্বের কঠোর অবস্থান বদলে শরণার্থীদের না ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড।

ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে সোমবার অবশেষে মুখ খুলেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের জন্য একেবারেই অনুতপ্ত নন। আল কায়দার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েছিল আমেরিকা। আফগান রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে দিতে নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Joe Biden afganistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE