সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাফল্যের প্রশংসা করল আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ জানাল, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে পাকিস্তান। আর নিরন্তর এই লড়াইয়ে এসেছে সাফল্যও! শুধু পাকিস্তানে নয়, বিশ্বে সন্ত্রাসী সত্তা দমনে পাকিস্তানের সাফল্যেরও ভূয়সী প্রশংসা করল ট্রাম্প প্রশাসন।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার পর যৌথ বিবৃতিতে উঠে এসেছে সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের ভূমিকার প্রসঙ্গ। পাশাপাশি, পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় প্রাণহানির জন্য সমবেদনাও জানিয়েছে আমেরিকা। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আঞ্চলিক, বিশ্বের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনে পাকিস্তান যথেষ্ট সফল।’’
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘটনায় সাধারণ মানুষ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হতাহতের জন্য আমেরিকা সমবেদনা প্রকাশ করেছে।’’ এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বিবৃতিতে জাফর এক্সপ্রেসে হামলার প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, খুজ়দারে একটি স্কুলে বোমা হামলার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগপ্রকাশ করা হয়েছে।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ওই সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নয় জঙ্গিঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়। ভারত প্রথম থেকেই দাবি করেছে, পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীরা ঘাঁটি গেড়েছে। আর তাদের মদত দিচ্ছে পাকিস্তান! যদিও পাকিস্তান প্রথম থেকেই সেই দাবি নস্যাৎ করে আসছে। তাদের পাল্টা দাবি, সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের ক্ষতি হচ্ছে। তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। তবে তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। তার মধ্যেই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে একের পর এক পদক্ষেপ করছে পাকিস্তান।
বাণিজ্যচুক্তি এবং শুল্ক নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার চাপানউতর অব্যাহত। সম্প্রতি খনিজ তেল নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। সেই সূত্রে পাকিস্তানের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।
আরও পড়ুন:
প্রশ্ন উঠছে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার ‘বন্ধুত্বে’ চিড় ধরল? আর সেই সুযোগকেই কি কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান? ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তৎপরবর্তী দুই দেশের সংঘাতের পরে দু’মাসে দু’বার আমেরিকায় গিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি পরমাণু-হুমকিও দেন! তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ধ্বংস হব।’’ মুনিরের এই বক্তব্য নিয়ে আমেরিকা কিছু না বললেও ভারত নিন্দা করেছে। বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলে, ‘‘ভারত পরমাণু হুমকির সামনে মাথা নত করবে না। আগেও তা স্পষ্ট করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ করব।’’
মুনিরের মার্কিন সফরের মধ্যেই বালোচ বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ)-কে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করে আমেরিকা। পাশাপাশি, বিএলএ-র সহযোগী ‘মজিদ ব্রিগেড’কেও জঙ্গিগোষ্ঠী হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন প্রশাসন। সেই আবহে এ বার সন্ত্রাস নিয়ে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের যৌথ বিবৃতি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত কূটনৈতিক মহলের।