Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Myanmar Violence

গা-ঢাকা দিয়ে কাজ করছেন মায়ানমারের সাংবাদিকেরা

তবে মায়ানমারের সাংবাদিক-সম্পাদকেরা মনে করেন, সে দেশে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনের জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা।

অভিনব: সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জলের তলাতেও। মায়ানমারের বার্ড আইল্যান্ডে।

অভিনব: সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জলের তলাতেও। মায়ানমারের বার্ড আইল্যান্ডে। রয়টার্স

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৬
Share: Save:

নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করে ফের সেনারা ক্ষমতা দখল করেছে মায়ানমারে। আর তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ইয়াঙ্গন, নেপিদ-সহ গোটা দেশে। মানবাধিকারের তোয়াক্কা না-করে বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের রাস্তা নিয়েছে সেনাশাসক জুন্টা। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর নিশানা হয়েছে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকেরা। গণ-বিক্ষোভের জন্য সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করছে সেনারা, আর তাই সংবাদ সংগ্রহ থেকে প্রচার, পুরোটাই করতে হচ্ছে গা-ঢাকা দিয়ে। মঙ্গলবার সকালে গোপন ডেরা থেকে একটি ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে মায়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানালেন ইয়াঙ্গনের মিজিমা নিউজ়-এর প্রধান সম্পাদক সোয়ে মিন্ট এবং দ্য ইরাবতী পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আং চ। আলোচনাসভাটির আয়োজক ছিল হনলুলুর ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টার।


সোয়ে জানান, বিক্ষোভের মধ্যে সাদা পোশাকের গুপ্তচর পুলিশ ঢুকে গিয়ে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা তৈরি করছে। রাতের অন্ধকারে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। বহু সাংবাদিক অফিসে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। পরে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কাউকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দিন কয়েক আটক করে নির্যাতন চালানোর পরে। সোয়ে মিন্ট বলেন, “সব চেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় গুপ্ত-হামলা। দুষ্কৃতীদের দিয়ে দল তৈরি করেছে সেনারা। তাদের হাতে থাকছে লোহার রড বা লাঠি। সাংবাদিকেরা যখন ছবি তুলছেন বা খবর সংগ্রহ করছেন, পিছন থেকে তাদের উপরে হামলা করছে এরা।”


তবে মায়ানমারের সাংবাদিক-সম্পাদকেরা মনে করেন, সে দেশে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনের জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা। সেনা শাসনে থাকার অভ্যাস এ দেশের মানুষের রয়েছে। কিন্তু সীমিত আকারের হলেও গণতন্ত্রের স্বাদ তাঁরা পেয়েছেন। সেই গণতান্ত্রিক অভ্যাস থেকে আবার তাঁদের মিলিটারি বুটের নীচেয় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। “সেনা হাজার চেষ্টা করেও সেটা পারবে না,” বলছিলেন সোয়ে মিন্ট। তাঁর কথায়, “গণতন্ত্র যে একটা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পরে মানুষের টনক নড়েছে। ইন্টারনেটের কথাই ধরুন না— ছেলে-ছোকরারা এত দিন তো এটাকে গেম খেলায় বুঁদ হয়ে থাকা আর টিকটিক-এ হাসি-মস্করার উপাদানের বাইরে কিছু ভাবেনি। সেই ইন্টারনেট আজ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের সব চেয়ে বড় হাতিয়ার।”


আং চ আর সোয়ে মিন্ট জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্দোলনের খবর, কর্মসূচি যেমন আন্দোলনকারীরা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, সেনা ও পুলিশকে ধোঁকা দেওয়ার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে ইন্টারনেট— যে সুবিধা আগের আন্দোলনে তাঁরা পাননি। সোয়ে বলেন, “এ প্রজন্মের তরুণেরা ভীষণ স্মার্ট। প্রতিটা মুহূর্তে তারা সেনাদের গতিবিধির উপরে নজরদারি করে তাদের নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে। যেখান থেকে সেনারা অন্য জায়গায় যাচ্ছে, সেখানেই শুরু হচ্ছে বিক্ষোভ। এই কারণেই হতাহতের সংখ্যা এত কম।” আং চ বলেন, “এক তরুণ আমাকে হাসতে হাসতে বলছিলেন— আমাদের হাত খালি হলেও মগজাস্ত্র আছে, আর ওদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও মাথায় কিস্যু নেই!”
সোয়ে বলেন, “এই অভ্যুত্থান একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। একই সঙ্গে মায়ানমারের সিংহ ভাগ মানুষ মনে করেন, চিনের পরামর্শ ছাড়া সেনারা এই পদক্ষেপ করেনি। দেশে এই মুহূর্তে চিন-বিরোধিতা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে মানুষের দাবি— আপনারা সেনা শাসকদের উপরে চাপ সৃষ্টি করুন, যাতে নির্বাচিত সরকারের হাতে তারা ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Myanmar Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE