প্রশ্ন ওঠে, কুয়েতের মতো দেশকে কেন মুদ্রা ছাপানোর জন্য ভারতের উপর নির্ভর করে থাকতে হত? এর জন্য ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে হবে। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল পারস্য উপসাগরীয় গাল্ফ অঞ্চল। এই অঞ্চলেরই একটি দেশ কুয়েত। ব্রিটিশরা মনে করেছিলেন, কুয়েতের জন্য আলাদা করে মুদ্রা চালু করার প্রয়োজন ছিল না সে সময়। তখন কুয়েতের অর্থনীতি সে ভাবে ফুলে ফেঁপেও ওঠেনি।
ব্রিটিশরাই কুয়েতে ভারতীয় মুদ্রা চালু করেছিলেন। ঔপনিবেশিক ভারতে যে মুদ্রা চলত, হুবহু একই মুদ্রা ছিল কুয়েতেও। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরও কুয়েতকে একই মুদ্রা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল দিল্লি। কুয়েতের অর্থনীতি তখন ভীষণ দুর্বলও ছিল। কুয়েত মূলত তেলের দেশ। ১৯৩০-এর শেষের দিকে কুয়েতের ভূগর্ভে বিপুল তেলের সন্ধান মিললেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সেই তেল বেচে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারছিল না কুয়েত।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী কয়েক বছরও কুয়েতে তাই ভারতীয় মুদ্রাই চালু ছিল। কিন্তু ভারতের সামনে ক্রমশ এক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। সোনার চোরা কারবার। কুয়েত থেকে সোনা ভারতে নিয়ে আসতে শুরু করেছিল পাচারকারীরা। ভারতে সেই সোনা বেচে টাকা নিয়ে ফিরে যেত কুয়েতে তারপর সেই টাকা অন্যান্য বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে বদলে নিত। এর ফলে ভারতের অর্থনীতি ধাক্কা খেতে শুরু করে।
এই ক্ষতি সামাল দিতে ১৯৫৯ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কুয়েতের জন্য আলাদা মুদ্রা চালু করে। যার নাম রাখা হয়েছিল গাল্ফ রুপি। দেখতে অনেকটা ভারতীয় মুদ্রার মতোই ছিল গাল্ফ রুপি। মুদ্রার উপরে ইংরাজিতে ‘ভারত সরকার’ লেখাও থাকত। কিন্তু ভারতে এই মুদ্রা ছিল অপ্রচলিত। যার ফলে সোনাপাচার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। পরবর্তী কয়েক বছর এ ভাবেই চলে।
১৯৬১ সালে স্বাধীন হয় কুয়েত। তত দিনে তেল রফতানি করে সে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এরপরই কুয়েতের সরকার আলাদা মুদ্রা চালু করে। নাম রাখা হয় কুয়েতি দিনার। সে সময় এক কুয়েতি দিনার ছিল ভারতীয় মুদ্রায় ১৩ টাকার কিছু বেশি। যদিও ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কুয়েতি দিনারের পাশাপাশি গাল্ফ রুপিও প্রচলিত ছিল সে দেশে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ভারতের মুদ্রার মূল্য ক্রমশ নেমে যাওয়ায় গাল্ফ রুপির ব্যবহার বন্ধ করে দেয় কুয়েত।
পরবর্তীকালে কুয়েত তার মুদ্রার মূল্য আমেরিকার ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড এবং আরও অনেক বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে ‘নির্দিষ্ট’ (ফিক্সড) করে দেয়। যাকে বলা হয় ‘ফিক্সড কারেন্সি রেট’। এর অর্থ, যে সমস্ত দেশের মুদ্রার সঙ্গে ‘ফিক্সড’ করা হয়েছে, তাদের মুদ্রার মূল্যের সঙ্গে কুয়েতের দিনারের মূল্যও ওঠানামা করবে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ কিন্তু ‘ফ্লোটিং কারেন্সি রেট’ প্রয়োগ করে থাকে। যার ফলে সেই সমস্ত দেশের মুদ্রার মূল্য নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রার মূল্যের ওঠা নামার উপর।
‘ফিক্সড কারেন্সি রেট’ অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার এক কুয়েতি দিনার ভারতীয় মুদ্রায় ২৪৩ টাকা ছাড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রা এখন কুয়েতেরই। বিশ্বের প্রথম ১০ দামি মুদ্রার তালিকায় কুয়েতের পরেই রয়েছে বাহারাইনের মুদ্রা বাহরাইনি দিনার। বৃহস্পতিবারের হিসাব বলছে, এক বাহরাইনি দিনার প্রায় ১৯৪ টাকার সমান। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওমানি রিয়্যাল। এক রিয়্যাল প্রায় ১৯৪ টাকার সমান। ব্রিটিশ পাউন্ড রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। এক পাউন্ডের মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১০১ টাকা। তালিকায় শেষে রয়েছে আমেরিকার ডলার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy