Advertisement
E-Paper

আমি শ্বাস নিতে পারছি না, শেষ কথা খাশোগির

টিভি চ্যানেলটি জানিয়েছে, ওই অডিয়ো টেপটি কোনও ভাবে হাতে পায় তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা। তারাই রেকর্ডিংটির কথাবার্তা, শব্দ বিশ্লেষণ করে দাবি করেছেন, ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনসুলেটে খাশোগিকে খুনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৬
জামাল খাশোগি

জামাল খাশোগি

একটা চাপা কণ্ঠস্বর— ‘‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না। শ্বাস নিতে পারছি না।’’

মৃত্যুর আগে এটাই সম্ভবত শেষ কথা ছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির। একটি প্রথম সারির মার্কিন টেলিভিশনের হাতে এসেছে সাংবাদিক-হত্যার শেষ মুহূর্তের ওই অডিয়ো টেপ। এ দিন বোমা ফাটিয়েছে তারাই।

টিভি চ্যানেলটি জানিয়েছে, ওই অডিয়ো টেপটি কোনও ভাবে হাতে পায় তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা। তারাই রেকর্ডিংটির কথাবার্তা, শব্দ বিশ্লেষণ করে দাবি করেছেন, ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনসুলেটে খাশোগিকে খুনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। সম্পূর্ণ ছক কষে খুন করা হয়েছিল তাঁকে। অডিয়ো টেপটিতে ধরা পড়েছে, খাশোগিকে হত্যার সময়ে একাধিক ফোন গিয়েছিল কনসুলেট থেকে। তুরস্কের গোয়েন্দাদের দাবি, ওই সব ক’টি ফোন করা হয়েছিল রিয়াধের বড় বড় মাথাদের। সাংবাদিককে খুন করার ছক কতটা এগোল, কী কী হল, সময়ে সময়ে সবটা জানানো হয় তাঁদের। ওই অডিয়োতে ধরা পড়েছে, হত্যাকারীদের সঙ্গে খাশোগির ধস্তাধস্তি, বাঁচার শেষ চেষ্টা। তাঁকে মারার পরে করাত দিয়ে দেহটাকে টুকরো টুকরো করে কাটার শব্দও স্পষ্ট ওই অডিয়ো টেপে। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলটি জানিয়েছে, ওই অডিয়ো টেপটি প্রথম বিশ্লেষণ করে তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা। চ্যানেলের হাতে এসেছে অডিয়োটির ইংরেজি অনুবাদ।

আরও পড়ুন: মাল্যের প্রত্যর্পণে সায় ব্রিটিশ কোর্টের, বড় জয় বললেন জেটলি

কনসুলেটে খাশোগির ঢোকা থেকেই অডিয়ো রেকর্ডিংটি শুরু। ইস্তানবুলের যথেষ্ট ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সৌদি কনসুলেটটি। অডিয়ো থেকে স্পষ্ট, খাশোগি নিশ্চিন্ত মনেই কনসুলেটে প্রবেশ করেন। জানতেন, বাগদত্তাকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র নিতে এটা নিয়মমাফিক অ্যাপয়েন্টমেন্ট। কিন্তু কনসুলেটে ঢোকার একটু পরেই টের পান, কিছু একটা গোলমাল রয়েছে। একটি লোককে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। মার্কিন টিভি চ্যানেলটি জানাচ্ছে, কণ্ঠস্বর শুনে মনে করা হচ্ছে ওই লোকটি মাহের আব্দুলআজিজ মুতরেব। তিনি সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের ঘনিষ্ঠ গোয়েন্দা কর্তা এবং প্রাক্তন সৌদি কূটনীতিক। লোকটি বলেন, ‘‘আপনি দেশে ফিরছেন।’’ খাশোগি জবাবে বলেন, ‘‘আপনি এটা করতে পারেন না।’’ পরের কথাটি ছিল মুতরেবের— ‘‘বাইরে লোকজন অপেক্ষা করছে।’’ এর পরেই বেশ কিছু লোক খাশোগির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধস্তাধস্তির শব্দ। খাশোগিও যে বাঁচার চেষ্টা করেছেন, অডিয়ো টেপে ধরা পড়েছে। একটু পরেই তাঁর দমবন্ধ করা আওয়াজ— ‘‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’’ ঠিক কখন খাশোগির মৃত্যু হয়েছিল, তা বোঝা যায়নি। তবে করাত দিয়ে তাঁর দেহটাকে টুকরো টুকরো করে কাটার শব্দ রয়েছে। সেই শব্দ ঢাকতে গান চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সব শেষ হওয়ার পরে তিনটি ফোন করেন মুতরেব। তিনটি ফোনই গিয়েছিল রিয়াধে। কী ভাবে এই অডিয়ো টেপটি তুরস্কের গোয়েন্দাদের হাত এসেছে, তা অবশ্য জানা যায়নি।

আরও পড়ুন: এক ডলারও নয় পাকিস্তানকে: নিকি

খাশোগি-হত্যায় সন্দেহভাজনদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সৌদি আরবের কাছে একাধিক বার আবেদন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এর্দোগান। রবিবারও সৌদি বিদেশমন্ত্রী সেই আর্জি খারিজ করে দেন। সৌদি আরব প্রথম থেকেই বলে আসছে, খাশোগির সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গিয়েছিল ওই দলটি। হত্যার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। যদিও তদন্তে একাধিক তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে, যাতে পরিষ্কার, সব রকম প্রস্তুতি নিয়েই খাশোগিকে খুন করতে যাওয়া হয়েছিল সে দিন। প্রস্তুতি ছিল বলেই, তাঁকে খুন করে দেহটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে অ্যাসিডে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা গিয়েছিল। নয়া অডিয়ো টেপটি থেকে প্রমাণ আরও জোরদার হল বলেই মনে করছে মার্কিন টিভি চ্যানেলটি। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই সৌদি আরবের পাশে। কোনও মূল্যেই দু’দেশের সম্পর্ক তিনি খারাপ করতে চান না। এমনকি, সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের নির্দেশে ওই খুন করা হয়েছিল, সিআইএ সে কথা জানানোর পরেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

Jamal Khassoggi Audio Tape US Television Murder Saudi Arabia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy