Advertisement
০২ মে ২০২৪
Maya Civilization

মেক্সিকোর গভীর জঙ্গলে সন্ধান প্রাচীন মায়া শহরের

জুন মাসে মেক্সিকোর বালামকুর  বাস্তুতান্ত্রিক সংরক্ষণ ক্ষেত্রের মধ্যে এমন এক প্রাচীন মায়া শহরের সন্ধান পেয়েছেন ইভান ও তাঁর দল, যা গড়ে উঠেছিল ৬০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।

Mayan City

মেক্সিকোর ঘন জঙ্গলে প্রাচীন মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। —প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
মেক্সিকো সিটি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ০৯:০১
Share: Save:

অন্বেষণ এক নেশার মতো, ঘন জঙ্গল, বিষাক্ত সাপ, জাগুয়ার কোনও কিছুই সেই নেশা থেকে বিরত রাখতে পারে না। এই আপ্তবাক্য মেনেই ৩০ বছর ধরে মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপ অঞ্চলের ঘন জঙ্গলে প্রাচীন মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে চলেছেন ডক্টর ইভান শ্প্রাইস। জঙ্গল তাঁকে হতাশ করেনি, স্লোভেনিয়ার এই প্রত্নতত্ত্ববিদ ২০১৩ সাল থেকেই জঙ্গুলে লতাপাতা কেটে বের করেছেন একাধিক শহরের ধ্বংসাবশেষ। তবে, তাঁর সাম্প্রতিক আবিষ্কারের প্রতি প্রচারের আলো হয়েছে আর একটু জোরালো।

জুন মাসে মেক্সিকোর বালামকুর বাস্তুতান্ত্রিক সংরক্ষণ ক্ষেত্রের মধ্যে এমন এক প্রাচীন মায়া শহরের সন্ধান পেয়েছেন ইভান ও তাঁর দল, যা গড়ে উঠেছিল ৬০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। ইভান এই শহরের নাম দিয়েছেন ওকোমতুন, প্রাচীন মায়া ভাষায় যার অর্থ ‘পাথরের থাম’। প্রত্নতত্ত্ববিদদের দলটির দাবি, প্রাচীন শহরটির গঠনের জন্যই তাঁরা এই নাম বেছে নিয়েছেন। সারা শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে থাম ও পিরামিডের মতো একাধিক স্থাপত্য। যেগুলির কোনওটার উচ্চতা পঞ্চাশ ফুটেরও বেশি।

পশ্চিম গোলার্ধের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা হল মায়া সভ্যতা। ২০০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্য আমেরকায় কার্যত তাদেরই রাজত্ব চলত। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এই সভ্যতার মানুষ জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত ও বিজ্ঞানে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। বলা হয়, চকলেট ও রবারের আবিষ্কারও তাঁদের হাত ধরে। লেখার প্রচলনও ছিল তাঁদের মধ্যে। কিন্তু নবম শতক থেকে হঠাৎ করেই ক্ষয়ীভূত হয় এই সভ্যতা। শহরগুলি ছেড়ে চলে যান অধিবাসীরা।

আগেও গভীর জঙ্গল থেকে একাধিক শহর খুঁজে বের করেছেন ইভান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ২০১৩ সালে খুঁজে পাওয়া অষ্টম শতকের শহর চাকতুন। যাতে বাস করত আন্দাজ ৪০ হাজার মানুষ। তার ঠিক এক বছর পরে আবিষ্কৃত লাগুনিতা এবং তামচেন শহরও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবুও ইভান মনে করেন, ওকোমতুন আবিষ্কার হওয়ার ফলে ঠিক কী কারণে প্রায় ১২০০ বছর আগে শেষ হয়ে গেল মায়া সভ্যতা তার হদিশ মিলতে পারে। হঠাৎ করে নিজেদের তৈরি শহরগুলি ত্যাগ করেছিলেন মায়া সভ্যতার মানুষ। তার পিছনে কি রয়েছে অতিমারি, শত্রুর আক্রমণ, জলবায়ুর অবক্ষয় নাকি স্রেফ জীবনধারার পরিবর্তন?

বালামকু বাস্তুতান্ত্রিক সংরক্ষণ ক্ষেত্রের জীববৈচিত্র ও ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। অন্তত ৮৬ রকম প্রাণীর খোঁজ পাওয়া যায় এখানে। তবে জঙ্গলে প্রবেশ করার কোনও পথ নেই। ইভান তাঁর দলের সদস্যদের সাহায্যে লিডার (লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমে এলাকার মানচিত্র তৈরি করেন। তার পরে শুরু হয় জঙ্গল কেটে প্রাচীন শহরে পৌঁছনো। জানা গিয়েছে, অন্য মায়া শহরের মতো এই শহরেরও কেন্দ্রে রয়েছে এক বিরাট স্থাপত্য। এ ছাড়া রয়েছে ক্রীড়াঙ্গন, তিনটি বাজার এলাকা, ৫০ ফুট ও ৮০ ফুটের দুটি পিরামিড-জাতীয় স্থাপত্য।

ইভানের এই আবিষ্কার নিয়ে দেশ-বিদেশের একাধিক গবেষকদের দাবি, মায়া সভ্যতা নিয়ে ১৫০ বছর ধরে চলা গবেষণায় নতুন দিক দেখাতে পারবে ওকোমতুন।

‘ইন্ডিয়ানা জোনস’ এ ভাবেই হয়তো সত্যি হয়ে ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maya Civilization Mexico
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE