১২৭ কোটি বাংলাদেশি মুদ্রার লেনদেন করেছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির হত্যায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল মাসুদ করিম ও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রবিবার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, অভিযুক্তদের ব্যাঙ্কের নথি খতিয়ে দেখে ১২৭ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া এই তথ্যের ভিত্তিতে ফয়সালের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার সংক্রান্ত একটি পৃথক মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্রে খবর, বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ফয়সাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের একাধিক অস্বাভাবিক লেনদেনের খোঁজ পেয়েছে তারা। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই টাকা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ব্যবহার করা হত। এ পরেই অভিযুক্ত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখনও গচ্ছিত প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ শুরু করা হয়েছে। তবে ফয়সাল এখনও পলাতক। খোঁজ মিলছে না ফয়সালের সহকারী তথা খুনে অন্যতম অভিযুক্ত আলমগীর শেখেরও।
আরও পড়ুন:
অভিযোগ, ফয়সাল ও আলমগীর উভয়েই দেশের পূর্বতন শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন কি না, তা নিয়ে এখনও ধন্দে বাংলাদেশের পুলিশ। বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মহম্মদ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। অভিযুক্তেরা ভারতে পালিয়ে এসেছেন কি না, সে বিষয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। অভিবাসন সংক্রান্ত নথিতে ফয়সাল বা আলমগীরের দেশ ছা়ড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবৈধ ভাবে সীমানা পেরিয়ে তাঁরা অন্য দেশে চলে গিয়েছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন ফয়সালেরা। এ বিষয়ে ফয়সালের স্ত্রী, মা-বাবা এবং বান্ধবীকে জেরা করা হচ্ছে। দুই অভিযুক্তের পাসপোর্টও ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হাদি। তাঁকে সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। ছ’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে। হাদির হত্যাকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। তাঁদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফয়সালের পরিবারের সদস্যেরাও রয়েছেন। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, হাদিকে খুনের আগে স্ত্রী এবং বান্ধবীর সঙ্গে একাধিক বার ফোনে কথা বলেছিলেন ফয়সাল। ফোনে কী কথা হয়েছিল, সে সব বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ফয়সালের পরিজনদের।