(বাঁ দিকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়ু (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদী প্রসঙ্গে মলদ্বীপের মন্ত্রীদের অবমাননাকর মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে। মলদ্বীপ সরকারও ওই মন্ত্রীদের সাসপেন্ড করতে বাধ্য হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন সে দেশের সাংসদ। মন্ত্রীদের মন্তব্যকে তিনটি বিশেষণে ভূষিত করেছেন তিনি।
মলদ্বীপের সাংসদ তথা প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার এলভা আবদুল্লা রবিবার এনডিটিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর দেশের মন্ত্রীদের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ওই মন্তব্য আসলে ‘আপত্তিকর’, ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘বৈষম্যমূলক’। এলভা বলেন, ‘‘ভারত ঠিকই বলছে। তাদের রেগে যাওয়াই উচিত। যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা আপত্তিকর। তবে ওই মন্তব্য মলদ্বীপের সাধারণ মানুষের মতামত নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই লজ্জাজনক এবং বৈষম্যমূলক মন্তব্যের জন্য ভারতের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি।’’
মন্ত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্য ভুলে গিয়ে ভারতের মানুষকে আবার মলদ্বীপে ‘ফিরতে’ বলেছেন সাংসদ এলভা। মলদ্বীপ বিতর্কের পর থেকেই ভারতের এক্স হ্যান্ডেলে ওই দ্বীপরাষ্ট্রকে বয়কট করার ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। সেই ট্রেন্ড ফিরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন এলভা। ভারত থেকে বহু মানুষ ছুটি কাটাতে মলদ্বীপে যান। মলদ্বীপের পর্যটকদের একটা বড় অংশই ভারতীয়। তাঁরা যেন মলদ্বীপ থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সাংসদ তার জন্য আর্জি জানিয়েছেন ভারতীয়দের কাছে।
এলভা স্বীকার করে নিয়েছেন, ভারত মলদ্বীপের দীর্ঘ দিনের বন্ধু। পর্যটন ছাড়াও দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষার জন্য তারা ভারতের উপর নির্ভরশীল। বিতর্কতি মন্তব্য করা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মলদ্বীপের বর্তমান সরকার কড়া পদক্ষেপ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন মোদী। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করা হয়। অভিযোগ, মলদ্বীপের ওই মন্ত্রীরা তেমনই কিছু ছবিতে মোদীকে ‘পুতুল’ এবং ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত-ইজ়রায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে বিতর্কের মুখে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়।
মন্ত্রীদের ওই মন্তব্যে ভারতের সমাজমাধ্যমে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়। সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় চার দিকে। মলদ্বীপ সরকার প্রথম দিকে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও পরে সে দেশের বিরোধী দলগুলিও এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকারের সমালোচনা শুরু করে। মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি (যাঁকে পরাজিত করে মুইজ়ু সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেছেন) এবং আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদ মোদীর সমালোচনা করা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তোলেন। তাঁরা জানান, ভারত মলদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ ‘মিত্র’। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর পরই ঘরে বাইরে চাপের মুখে মুইজ়ু সরকার তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়।
মুইজ়ু চিনপন্থী শাসক হিসাবে পরিচিত। এর আগে মলদ্বীপে যিনি ক্ষমতায় ছিলেন, সেই সোলি আবার ভারত ঘেঁষা। ফলে তাঁকে হারিয়ে মুইজ়ু কুর্সিতে বসার পরেই মলদ্বীপ এবং ভারতের সম্পর্কে বদলের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পরে ভারতের সেনাকে মলদ্বীপ থেকে সরে যেতে বলেন প্রেসিডেন্ট মুইজ়ু। অন্য দিকে, চিনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতাও কারও নজর এড়ায়নি। এই পরিস্থিতিতে মলদ্বীপের মন্ত্রীদের মন্তব্যে আর কী পদক্ষেপ করে মুইজ়ু সরকার, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy