নরেন্দ্র মোদী এবং মহম্মদ মুইজ়ু। —ফাইল চিত্র।
ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করল মলদ্বীপ সরকার। এই তিন জনকে কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছিলেন ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটির একাধিক বিরোধী নেতা। ভারতেও মলদ্বীপকে বয়কট করার ডাক দিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হন নেটাগরিকদের একাংশ। তার পরেই তিন জনকে সাসপেন্ড করার কথা জানায় মলদ্বীপের বিদেশ মন্ত্রক।
এই তিন মন্ত্রী হলেন মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ। সম্প্রতি ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন মোদী। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করা হয়। অভিযোগ এই যে, ওই মন্ত্রীরা তেমনই কিছু ছবিতে মোদীকে ‘পুতুল’ বলে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। ভারত-ইজ়রায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়।
রবিবার প্রথমে তিন মন্ত্রীর মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল মলদ্বীপের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়ুর সরকার। কিন্তু সে দেশেরই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদ, মহম্মদ সোলি-সহ একাধিক বিরোধী নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তোলেন। ভারতের মতো ‘বন্ধু দেশে’র প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানান তাঁরা।
সোলিকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট মুইজ়ু সে দেশের ক্ষমতায় আসার পর থেকে মলদ্বীপের দীর্ঘ দিনের ‘ভারত ঘেঁষা’ বিদেশনীতিতে বড় বদলের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। সোলির ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন ‘চিনপন্থী’ বলে পরিচিত মুইজ়ু। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভারতকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে মুইজ়ু বলেন, ‘‘আমাদের দেশের মাটি থেকে সমস্ত বিদেশি সেনাকে আমারা ফেরত পাঠাব।’’
এ ক্ষেত্রে মুইজ়ু নাম না-করলেও স্পষ্ট ভাবেই ভারতকে নিশানা করেন। কারণ, ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনা। পরে কূটনৈতিক স্তরেও ভারতকে সেনা সরাবার বার্তা দেয় মলদ্বীপ। দ্বীপরাষ্ট্রটির ঘরোয়া রাজনীতিতেও মুইজ়ুর দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলডিভস (পিপিএম) এই বলে প্রচার চালায় যে, দেশের সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করতেই সেনা রেখে দিয়েছে ভারত।
গণতন্ত্রের রাস্তা ধরে পথচলা শুরু করার পর মলদ্বীপের সব প্রেসিডেন্টেরই প্রথম গন্তব্য হয়েছে ভারত। এমনকি ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত প্রেসিডেন্টরাও শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতেই এসেছেন। কিন্তু সেই নিয়মে ব্যত্যয় ঘটিয়ে নয়াদিল্লির আগে বেজিং সফরে যেতে চলেছেন মুইজ়ু। এই আবহে তাঁর মন্ত্রীদের মোদী সম্পর্কিত মন্তব্য এবং বিতর্কের মুখে কার্যত বাধ্য হয়ে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy