Advertisement
E-Paper

আইএস যোগ স্পষ্ট, তবু নজর এড়াল কী ভাবে

মার্কিন পপ তারকা আরিয়ানা গ্রান্ডের অনুষ্ঠানে সলমন আবেদি একা বিস্ফোরণ ঘটালেও তাকে কোনও বড় জঙ্গি-চক্র মদত দিয়েছিল বলেই মনে করছে ব্রিটিশ সরকার।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ০২:১৪
আত্মঘাতী জঙ্গি সলমন আবেদি

আত্মঘাতী জঙ্গি সলমন আবেদি

মার্কিন পপ তারকা আরিয়ানা গ্রান্ডের অনুষ্ঠানে সলমন আবেদি একা বিস্ফোরণ ঘটালেও তাকে কোনও বড় জঙ্গি-চক্র মদত দিয়েছিল বলেই মনে করছে ব্রিটিশ সরকার। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রু়ড বুধবার বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন জঙ্গি হামলা হয়েছে। তবে সোমবারের হামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এটি একা জঙ্গির কীর্তি নয়। এর পিছনে কোনও বড়সড় জঙ্গি চক্র কাজ করছে।’’

সাম্প্রতিক কালে যেখানে যত জঙ্গি হামলা হয়েছে, দায় নিয়েছে আইএস। সোমবারের আত্মঘাতী হামলার পরেও বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তারা আত্মঘাতী জঙ্গিকে ‘অভিনন্দন’ জানায়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, লিবিয়ায় ঘনঘন যাতায়াত করত আবেদি। ফলে আইএস-এর কোনও নেটওয়ার্কই যে আবেদির মগজধোলাই করেছে, এবং তাকে হামলায়
‘সাহায্য’ করেছে, এ বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত ব্রিটিশ গোয়েন্দারা।

এ রকম ‘সাহায্যকারীদের’ খোঁজেই দক্ষিণ ম্যাঞ্চেস্টারের ফ্যালোফিল্ডে আবেদির বাড়িতে মঙ্গলবার হানা দিয়েছিলেন সশস্ত্র পুলিশ অফিসাররা। তার কিছু ক্ষণ আগেই ত্রিপোলি থেকে সলমনের ভাইকে গ্রেফতার করেন লিবিয়ার গোয়েন্দারা। ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও চার সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ।

ব্যথিত: শোকের ভাষায় মিলে গেলেন মুসলিম-ইহুদি। বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারের অ্যালবার্ট স্কোয়ারে। ছবি: রয়টার্স।

সলমনের প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন, স্যালফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা আর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করতে ঢুকেছিল সলমন আবেদি। ডিগ্রি নেওয়া অবশ্য হয়নি। ২০১৫ সালেই কলেজছুট। বেশ কয়েক বার লিবিয়া যাতায়াত করেছে সে। সম্প্রতি লিবিয়া গিয়ে টানা প্রায় তিন সপ্তাহ কাটিয়েছে। গোয়েন্দারা বোঝার চেষ্টা করছেন, ম্যাঞ্চেস্টার এরিনায় হামলা চালানোর আগে সে লিবিয়ার জঙ্গিদের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পেয়েছিল কি না। ঘটনাচক্রে, ব্রিটেনের নিরাপত্তা অফিসারদের কাছে আবেদির নামটি পরিচিত ছিল। এ বার প্রশ্ন উঠছে, সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছে জেনেও আবেদির গতিবিধি কেন নজরে রাখা হয়নি? বিশেষ করে গোয়েন্দারা ষখন এটাও জানতেন, ব্রিটেনে আইএস জঙ্গি নিয়োগকারী রাফায়েল হোস্তের (২৪) সঙ্গেও আবেদির যোগ ছিল।

এক কালে রাষ্ট্রপুঞ্জে কট্টরপন্থা নিয়ন্ত্রণে কর্মরত হামিদ আল-সায়েদ নামে এক ব্যক্তি এখন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটিতে রয়েছেন। তাঁর দাবি, আবেদির সঙ্গে ওর পরিবারের সম্পর্ক একেবারেই ভাল ছিল না। আবেদির বাবা-মা তাকে সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ইউনিভার্সিটিতেও ক্রমশ ফল খারাপ হতে শুরু করে তার। ইউরোপীয় জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়েও নিতে পারেনি আবেদি। তার প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে থেকে আবেদি দাড়ি রাখতে শুরু করেছিল। পোশাকেও এসেছিল পরিবর্তন। মাঝেমধ্যে রাস্তায় বসে প্রার্থনা করতেও দেখা গিয়েছে তাকে। নিজের বাড়ির জানলায় লিবিয়ার পতাকা এবং কিছু ব্যানারও ঝুলিয়েছিল সে।

আরও পড়ুন: শান্তির জলপাই গাছ হোন: পোপ

ম্যাঞ্চেস্টারের মুসলিম সম্প্রদায়ের বর্ষীয়ান এক সদস্য জানান, আবেদির ভাই আর বাবা নিয়মিত মসজিদে গেলেও তাকে খুব একটা দেখা যেত না। আইএসের প্রতি সমর্থন রয়েছে— ২০১৫ সালে এমনটা জানানোর পর তার মসজিদ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়। আর এ সময় থেকেই সে নজরে পড়ে পুলিশের। সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও গোয়েন্দা ও পুলিশের নজরে এড়িয়ে আবেদি কী ভাবে এ ভাবে বড় হামলা চালাল, এখন সেই প্রশ্নই উঠছে।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন, সশস্ত্র সেনা এবং পুলিশ মিলিত ভাবে জঙ্গি দমন অভিযানে নামছে। তার নাম, ‘অপারেশন টেম্পেরার।’ গত কাল রাত থেকেই গোটা দেশে সতর্কতা মাত্রা বাড়িয়ে ‘আশঙ্কাজনক’ করা হয়েছে। দেশের সব স্টেডিয়াম এবং স্টেশনে মোতায়েন করা হচ্ছে অন্তত এক হাজার সেনা অফিসার। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আগামী শনিবারই চেলসি আর আরসেনালের খেলা। তা ছাড়া ১ জুন ওয়েলসের মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছে, এই সব জায়গা ছাড়াও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বাকিংহাম প্যালেস, ১০ ডাউনিং স্ট্রিট, প্যালেস অব ওয়েস্টমিনস্টার এবং বিদেশি দূতাবাসগুলিতে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখুন। কোনও কিছু সন্দেহজনক মনে হলেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানান।’’

কাল নিখোঁজ বলা হলেও আজ পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরী অলিভিয়া ক্যাম্পবেল বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছে। মৃতের তালিকায় রয়েছেন কেলি ব্রুস্টার নামে এক অফিস-কর্মীও। তালিকায় আছেন পোল্যান্ডের দুই নাগরিকও। জখমদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।

Manchester attack IS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy