Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

১৯টি মেয়েকে আগলে কেন্টাকির ‘টেরিজা’

আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাচার হওয়া মেয়েদের উদ্ধার করে তাদের নিজের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সঙ্গেই রাখেন অ্যাঞ্জেলো। শুধু উদ্ধার নয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে এনে নানা কাজ শিখিয়ে ফের কর্মজীবনে ফিরিয়ে দেওয়াটাই তাঁর সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। গত ২০ বছর ধরে এই কাজটা করে যাচ্ছেন তিনি।

ত্রাতা: নিজের বাড়িতে অ্যাঞ্জেলো রেনফো। নিজস্ব চিত্র

ত্রাতা: নিজের বাড়িতে অ্যাঞ্জেলো রেনফো। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
কেন্টাকি (লুইভিল) শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

বাইরে যতটা শক্ত। ভেতরে ততটাই নরম। জোরে জোরে খোলা মনে হাসতে পারেন, আবার অন্যের দুঃখের কাহিনি শুনলেই দুই গাল বেয়ে নেমের আসে জলের ধারা। কেন্টাকির লুইভিল শহরে ডাটা স্ট্রিটের বাসিন্দা বছর উনপঞ্চাশের অ্যাঞ্জেলো রেনফোকে অনেকে ভালবেসে বলেন কেন্টাকির ‘মাদার টেরিজা।’

অ্যাঞ্জেলো অবশ্য মহাপুরুষদের সঙ্গে নিজের তুলনা টানাটা মোটেই পছন্দ করেন না। লাজুক হেসে বলেন, “অত বড় বড় মানুষের সঙ্গে তুলনা করবেন না। আমি শুধু নিজের কাজটা করছি। পাড়াতে আর একটা বাড়ি ভাড়া খুঁজছি। আমার ১৯টা মেয়ে। ওরা তিনটে বাড়িতে থাকে। মেয়ের সংখ্যা তো বাড়বেই। তখন ওদের কোথায় রাখব তাই ভাবছি শুধু।”

আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাচার হওয়া মেয়েদের উদ্ধার করে তাদের নিজের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সঙ্গেই রাখেন অ্যাঞ্জেলো। শুধু উদ্ধার নয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে এনে নানা কাজ শিখিয়ে ফের কর্মজীবনে ফিরিয়ে দেওয়াটাই তাঁর সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। গত ২০ বছর ধরে এই কাজটা করে যাচ্ছেন তিনি।

অ্যাঞ্জেলো জানান, তিনি নিজে ন’বছর বয়সে পাচারের শিকার হয়েছিলেন। তার পর মাদাকসক্ত হয়ে জেলও খেটেছেন কয়েক বার। জেল থেকে বেরিয়ে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে। নিজের বাড়িতে বসে অ্যাঞ্জেলো বলেন, “ভারতের মেয়েরা যেমন মূলত দারিদ্রের কারণে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে, আমেরিকার মেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে এই বিপদের পথে যায়। সেখান থেকে শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হয়ে অনেকে দেহব্যবসায় যেতে বাধ্য হয়।”

মার্কিন দূতাবাসের একটি কর্মশালায় ভারত থেকে এসেছি জানতে পেরে অ্যাঞ্জেলো বলেন, “শুনেছি ভারতে পাচারকারীরা গ্রেফতার হলেও তারা দ্রুত জামিন পেয়ে যায়। আমেরিকার অবস্থাটাও অনেকটা একই রকম। দু্’দেশেই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আরও আইন শক্ত হওয়া উচিত।”

অ্যাঞ্জেলোর বাড়িতে উদ্ধার হওয়া মেয়েরা থাকেন নিজের মেয়ের মতোই। অতিথি এলে আপ্যায়ন করা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করেন তারা। অ্যাঞ্জেলো ওদের যেমন নিজের হাতে রান্না শেখান, সে রকম যোগ ব্যায়াম শেখান। শেখান নানা রকম বৃত্তিমূলক কাজও। অ্যাঞ্জেলো জানান, আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা এই সব মেয়েরা মানসিক ও শারীরিক ভাবে নিগৃহীত। সেই ভয় এখনও মনে রয়ে গিয়েছে। সেটাই কাটানোর চেষ্টা করি সব সময়।’’

অ্যাঞ্জেলোর এই কাজকে কুর্নিশ করে গোটা শহর। অ্যাঞ্জেলোর পড়শি হ্যারিস বলেন, “মাদার টেরিজাকে কোনও দিন দেখিনি। অ্যাঞ্জেলোই আমাদের মাদার টেরিজা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE