Advertisement
E-Paper

পাকিস্তানে ঝটিকা সফর করে চমক দিলেন মোদী

দীর্ঘ শৈত্যের পর, গত জুলাই মাসে রাশিয়ার উফা-বৈঠকে জড়তা কাটিয়ে শুরু হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান শীর্ষ পর্যায়ের আদানপ্রদান। আজ চলতি বছর শেষ হওয়ার মুখে তার একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। এবং সেটি হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া আজকের মাস্টারস্ট্রোকের মাধ্যমেই।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:৪৬
পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে মোদী। এএফপি-র তোলা ছবি।

পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে মোদী। এএফপি-র তোলা ছবি।

দীর্ঘ শৈত্যের পর, গত জুলাই মাসে রাশিয়ার উফা-বৈঠকে জড়তা কাটিয়ে শুরু হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান শীর্ষ পর্যায়ের আদানপ্রদান। আজ চলতি বছর শেষ হওয়ার মুখে তার একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।

বারো বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে পা দিলেন কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। বিদেশমন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, সমস্ত চাপ কাটিয়ে মোদী যে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি নতুন গতি আনতে বদ্ধপরিকর তা আজকের এই ঘটনাটিই প্রমাণ করছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বৈঠকের পর বিদেশমন্ত্রী টুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘এ হল রাষ্ট্রনেতার মতো আচরণ। প্রতিবেশীর সঙ্গে এমন সম্পর্কই হওয়া উচিত।’’ পাশাপাশি, পাকিস্তানের মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা ইতিবাচক অভিমুখেই এগিয়েছে। প্যারিসে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে আলোচনার সময়েই স্থির হয়েছিল বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদেশসচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের আলোচনা আবার শুরু করার ব্যাপারে। তার পরেই ব্যাঙ্ককে দু’দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক হয়। ইসলামাবাদে হার্ট অব এশিয়ায় যোগ দিতে আসেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আজকের বৈঠকের পর দু’দেশই চাইছে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে সামগ্রিক আলোচনা শুরু করতে।’’

আজ প্রায় এক ঘণ্টা একান্তে কথা হয়েছে মোদী এবং শরিফের। আগামী বছর পুরোদস্তুর পাকিস্তান সফর করার জন্য মোদীকে ফের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নওয়াজ। সূত্রের খবর, সেই আমন্ত্রণ স্বীকার করে আগামী বছর যাওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদী। গত তিন সপ্তাহে পর পর দু’টি (ব্যাঙ্ককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক এবং সুষমা স্বরাজের ইসলামাবাদ সফর) ভারত-পাক আদানপ্রদানের পর্যালোচনা করেছেন দুই নেতা। স্থির হয়েছে সন্ত্রাস-সহ সমস্ত বিষয় নিয়ে আগামী মাসেই দু’দেশের বিদেশসচিব আলোচনায় বসবেন ইসলামাবাদে। দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ার সুবাদে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিপুল সুযোগকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগানো নিয়েও আজ আলোচনা করেছেন মোদী ও শরিফ।

মোদীর এই আকস্মিক পাক সফর নিয়ে কংগ্রেস স্বাভাবিক ভাবেই সরব হয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী আনন্দ শর্মা প্রশ্ন তুলেছেন, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে এমন কী পদক্ষেপ করল ইসলামাবাদ, যার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দৌড়ে যেতে হল সে দেশে? এই সফরের ফলে হাতেকলমে ভারত কী পেল তা-ও খোলসা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। কূটনৈতিক শিবিরে এই প্রশ্নও উঠেছে, পাক সেনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে আখেরে কোনও জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ হচ্ছে কি?

পড়ুন: জন্মদিনে শুভেচ্ছা, হঠাৎ সফরে শরিফের বাড়ি ঘুরে এলেন মোদী

বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, গত বছর শুরু হয়েও পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার পর, পাক প্রশ্নে এ বার যথেষ্ট কৌশলী এবং সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে মোদী সরকার। প্রথমত, শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বই নয়, একটি সমান্তরাল আলোচনার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গেও। এই মুহূর্তে যিনি সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সেই নাসির খান জানুজা এসেছেন সেনাবাহিনী থেকেই। তিনি ছিলেন পাক সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল। এই মুহূর্তে পাক সেনাপ্রধান রশিদ শরিফের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ যথেষ্ট ভাল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ব্যাঙ্ককে এই জানুজার সঙ্গেই দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সেই আলোচনা যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘মোদী যে পাকিস্তানের সঙ্গে এত দ্রুত আলোচনার গতি বাড়িয়ে চলেছেন তার পিছনে পাক সেনার প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাক সেনা কিছুটা কৌশলগত ভাবে স্থিতিস্থাপকতা (স্ট্র্যাটেজিক্যালি স্ট্রেচড) দেখাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।’’

পাশাপাশি, বর্ষশেষে তাঁর এই কৌশলী চালের ফলে দেশের অভ্যন্তরেও একটি বার্তা মোদী পৌঁছতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে তাঁর সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। চলছে তুমুল বিতর্ক। এমন সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে, সেখানে খানা খেয়ে আসার এই পদক্ষেপ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ অংশকে খুশি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর এই আচরণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছেও একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

পাশাপাশি, এই সফরের মধ্যে একটি বন্ধুত্বের বাতাবরণ তৈরি করলেও, সেটি করা হয়েছে এতটাই আকস্মিক ভাবে যে কোনও প্রত্যাশার চাপ তৈরি হওয়ার সুযোগই দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া, রাষ্ট্রীয় সফরে যেমন দ্বিপাক্ষিক দেনাপাওনার হিসাব ও প্রত্যাশা থাকে, যৌথ বিবৃতির শব্দচয়ন নিয়ে বিবৃতির ঝড় ওঠে, এই ধরনের সৌজন্য সফরে তেমনটা হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। এখানে কাশ্মীর নিয়ে একটি শব্দও প্রকাশ্যে উচ্চারণ করার প্রয়োজন পড়ে না, অথবা সাংবাদিক সম্মেলনও হয় না। ফলে মোদীর এহেন সফরে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারেরও অখুশি হওয়ার কোনও কারণ থাকছে না।

lahore nawaz sharif narendra modi agni roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy