সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশ সফরে গিয়ে জানিয়েছিলেন, পরিকল্পিত ভাবেই জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল। এ বার একই বক্তব্য জানালেন ইউনূসের তথ্য উপদেষ্টা মো.মাহফুজ আলম। ফেসবুক পোস্টে তিনি সবিস্তারে লিখেছেন, কেন ওই অভ্যুত্থানকে পরিকল্পিত বলছেন তাঁরা। সমাজমাধ্যমে তাঁর যুক্তি, ‘পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে মেটিকুলাস ডিজাইন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান আর ’৭১-এর মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন ও বাঙ্গালি-বিহারি দাঙ্গা সঠিক হইতে পারলে ’২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান মেটিকুলাস ডিজাইন হইলে সমস্যা কোথায়’? যদিও এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামকে মেলানো যায় না।
ওই পোস্টেই মাহফুজ জানিয়েছেন, জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে আদৌ ‘মব’ বলা যায় না। তাঁর দাবি, ‘মব ভায়োলেন্স’ প্রতিরোধে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, আইনের শাসন, কার্যকর এবং জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র দরকার। তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে প্রথম ‘মব ভায়োলেন্স’ হয়েছিল বিহারি জনগোষ্ঠীর উপর। তার পরে মব হয়েছে ছাত্র ও তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অথচ মুজিববাদ বিরোধীদের উপর। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলির সরাসরি ইন্ধনে গত ৫৩ বছর ‘মব ভায়োলেন্স’ হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর। মব-এর সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করলে তথাকথিত জনতার আদালত, জনতার মঞ্চ ’৯৬, ২৮ অক্টোবর, শাহবাগ— সবই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স। সামাজিক ফ্যাসিবাদ যে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদেরই প্রতিক্রিয়া ও বিকার, তা না বুঝে সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও মব মানসিকতা মোকাবিলা অসম্ভব।
পরিকল্পিত অভ্যুত্থানের যুক্তি হিসেবে তিনি মুজিবুর-ভাসানীদেরও টেনে এনেছেন। তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য, ‘সিরাজুল আলম খান, তাজউদ্দিন, সিরাজ শিকদার আর ভাসানী, এমনকি খোদ শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানকে পরাজিত করতে মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ হয়ে পাপবোধ না করেন এবং আমরা তাদের নিয়ে (তাদের ভুল-সহই, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য) গর্বিত হতে পারি, তা হলে '২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে মেটিকুলাস ডিজাইন করে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করলে কেন এ প্রজন্ম গর্বিতবোধ করবে না’?
জুলাই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় দু’টি অংশ ছিল বলেও দাবি করেছেন মাহফুজ। তিনি জানান, প্রথম অংশ অবশ্যই ‘মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র জনতার। কিন্তু অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিক্নির্দেশনা এবং সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না থাকলে এ বিপ্লবী জনতা পরের অংশে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারত না। আন্দোলন এক সময়ে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল বলেও পোস্টে উল্লেখ করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘২রা আগস্টে অভ্যুত্থান বেহাত হয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের দিকে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তা ঠেকাতে পেরেছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব’।
মাহফুজের যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাঁর মতে, গত জুলাইয়ে যা হয়েছে, তাকে আর যা-ই হোক বিপ্লব বলা যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনও মব বিপ্লব হয় না। একটা দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই বিপ্লব হয়। তার একটা কেন্দ্রীয় শক্তি থাকে। কাজেই উগ্র সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি, আবেগপ্রবণ ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করে গত জুলাইয়ে সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিল। এর সঙ্গে স্বাধীনতার সংগ্রামকে কোনও ভাবেইমেলানো যায় না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)