শান্তির সন্ধানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের জনজাতি গোষ্ঠীগুলির প্রতিনিধিদের যৌথমঞ্চ ‘জিরগা’র প্রতিনিধিরা। কিন্তু মঙ্গলবার সে বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে বলে পাক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’ জানাচ্ছে। এর ফলে পাক ফৌজ নতুন করে আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে জঙ্গি দমন অভিযানে নামতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রকাশিত খবরে দাবি, টিটিপির নুর ওয়ালি গোষ্ঠীর সঙ্গে খাইবার জেলার জিরগা প্রতিনিধিরা শান্তিবৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু টিটিপি নেতৃত্ব শরিয়তি আইন বলবৎ এবং আফগান সীমান্ত পেরিয়ে অবাধ যাতায়াতের সুযোগের দাবিতে অনড় থাকায় বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। গত ২ অক্টোবর পাক আধাসেনা ফ্রন্টিয়ার কোরের ব্যবস্থাপনায় জনজাতি গোষ্ঠীগুলির প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১০০ সদস্যের ওই জনজাতি জিরগা গঠন করা হয়েছিল। এর আগে ২০২২ সালেও জিরগার মধ্যস্থতায় পাক সেনার সঙ্গে টিটিপির শান্তিবৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন:
শান্তিবৈঠকের প্রস্তুতির মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে টিটিপির একটি ডেরায় বিমানহামলা হয়। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিমানহানার ঘটনা ঘটে পাক সীমান্তবর্তী পকতিকা প্রদেশের একটি বাজারে। দু’টি হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আফগান তালিবান সরকার। ঘটনাচক্রে, তালিবান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফরের সূচনাপর্বেই হয় ওই বিমানহামলা। তারই জবাবে শনিবার (১১ অক্টোবর) পাক সীমান্তে হামলা চালানো হয়, দাবি কাবুলের। তারা জানায়, ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়েছে তাদের হামলায়। পাক সেনার পাল্টা দাবি, তাদের হামলায় ২০০ বেশি তালিবান সেনার নিহত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় দু’তরফের সংঘর্ষবিরতি হলেও ডুরান্ড লাইন (পাক-আফগান সীমান্ত) বরাবর এখনও উত্তেজনা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জেলা টিটিপি-র সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠী মেহসুদদের নিয়ন্ত্রণে। বালুচিস্তান প্রদেশের উত্তরাংশেও তাদের প্রভাব রয়েছে। আমেরিকায় ড্রোন হামলায় নিহত জঙ্গিনেতা বায়তুল্লা মেহসুদ প্রতিষ্ঠিত এই গোষ্ঠী বরাবরই পাক সরকারের বিরোধী। ২০১৪ সালে পেশোয়ারের একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে শতাধিক পড়ুয়াকে খুন করেছিল টিটিপি জঙ্গিরা। সোয়াট উপত্যকায় সক্রিয় পাক তালিবানের আর এক গোষ্ঠী ‘তেহরিক-ই নিফাজ-ই শরিয়তি মহম্মদি’ (টিএনএসএম)। এর আগে ২০০৯ সালে টিটিপি-র বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাহ-ই-নিজত’ করেছিল পাক সেনা। পাকিস্তানের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবিরোধী সেনা অভিযান। কিন্তু তাতে কোনও ফল মেলেনি।