E-Paper

সুশীলার বিদ্রোহী স্বামী যুক্ত ছিলেন বিমান ছিনতাইয়ে

আজ থেকে ৫২ বছর আগে নেপালের প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন যাঁরা, তাঁদেরই এক জন সুশীলার স্বামী দুর্গাপ্রসাদ সুবেদি। সুশীলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১৩
সুশীলা কার্কি।

সুশীলা কার্কি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ হিসেবে আন্দোলনকারীরা শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সুশীলা কারকিকে। স্বাভাবিক ভাবেই ৭৩ বছরের প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে জনমানসে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুশীলার দুর্নীতি বিরোধী সৎ ভাবমূর্তি, ভারতের প্রতি তাঁর টান— এ সব ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছেন কৌতূহলীরা।

সেই সূত্রেই সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। আজ থেকে ৫২ বছর আগে নেপালের প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন যাঁরা, তাঁদেরই এক জন সুশীলার স্বামী দুর্গাপ্রসাদ সুবেদি। সুশীলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। তাঁরা দু’জনেই ছিলেন রাজনীতি সচেতন মানুষ। ঘটনাটি ১৯৭৩ সালে ১০ জুনের। নেপাল থেকে ভারতে আসছিল যাত্রিবাহী একটি বিমান। দুই ইঞ্জিনের ওই বিমানে সে দিন ছিলেন অভিনেত্রী মালা সিনহাও। বিমানেই রাখা ছিল নেপাল স্টেট ব্যাঙ্কের লক্ষ লক্ষ টাকা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই বিমান ছিনতাইয়ের ছক কষেন দুর্গাপ্রসাদেরা। নেপালে তখন রাজতন্ত্র বিরোধী হাওয়া উঠতে শুরু করেছে। রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা করছেন বিদ্রোহীরা। সেই সশস্ত্র বিপ্লব সংগঠিত করতে দরকার ছিল বিপুল অর্থের। ফলে বিমান ছিনতাইয়ের ছক কষা হয়।

কথিত, নেপাল কংগ্রেসের নেতা গিরিজা প্রসাদ কৈরালার মস্তিষ্কপ্রসূত বিমান ছিনতাইয়ের চিত্রনাট্যে যে প্রধান তিন কুশীলব ছিলেন, তাঁদের মধ্য অন্যতম সুশীলার স্বামী। বাকিরা নগেন্দ্র ধুংগেল আর বসন্ত ভট্টরাই। তৎকালীন নেপাল কংগ্রেসের যুব নেতা দুর্গাপ্রসাদ আর তার দুই সহচর সে দিন সাধারণ যাত্রী সেজে বিমানে উঠেছিলেন। কাকপক্ষীটিও টের পায়নি তাঁদের আসল উদ্দেশ। বিমান যখন গন্তব্যে পৌঁছে রানওয়ের মাটি ছুঁয়েছে, তখন ককপিটে ঝড়ের বেগে ঢুকে পড়লেন তিন জন। বিমান চালকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে বলা হল, বিহারের ফরবেসগঞ্জে উড়ান নিয়ে যেতে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন আর জনা পাঁচেক বিদ্রোহী। ফরবেসগঞ্জে উড়ান পৌঁছতেই, বিমান থেকে নগদের তিনটি বাক্স ছিনতাই করে তাঁরা পালালেন গভীর জঙ্গলে। সে অনেক টাকা। নেপালি মুদ্রায় প্রায় ৪ লক্ষ ডলারের সমান। সেই সময় একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে নেপালি দূতাবাসের তরফে দুর্গাপ্রসাদ ও তাঁর সঙ্গীদের এই কীর্তির কথা ফলাও করে ছাপা হয়েছিল।

পরে রাজতন্ত্রের অবসান হয়। গিরিজা প্রসাদ কৈরালা চার বার প্রধানমন্ত্রী হন। নেপাল কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করেন দুর্গাপ্রসাদেরা। ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে ওই ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেন রাষ্ট্রপুঞ্জে নেপালের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত দীনেশ ভট্টরাই। তিনি বলেন, ‘‘রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে তাঁর দল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই বিপ্লবকে বাস্তবের আলো দেখানোর জন্য ওই অর্থের প্রয়োজন ছিল।’’ তবে আইনের হাত থেকে ছাড় পাননি কেউই। নগেন্দ্র ধুংগেল ছাড়া সকলেই এক বছরের মধ্যে ভারতে ধরা পড়েন। দুর্গাপ্রসাদ ও তার সঙ্গীরা ২ বছর হাজতবাস করেন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসেন নেপালে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sushila Karki Nepal Prime Minister Nepal Unrest Nepal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy