Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

উপড়ে ফেলুন বর্ণবিদ্বেষ, বিশ্বকে বার্তা জেসিন্ডার

জেসিন্ডা বুঝিয়েছেন, অভিবাসনের মাত্রা বেড়েছে বলেই বর্ণবিদ্বেষ ক্রমশ বাড়ছে— এই ধারণা তিনি মানেন না।

নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। ছবি: এএফপি।

নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

বর্ণবিদ্বেষী- দক্ষিণপন্থী মতাদর্শকে যদি গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে হয়, তার জন্য লড়তে হবে গোটা দুনিয়াকেই। ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে জঙ্গি হামলার সাক্ষী হওয়ার পরে এমন কথাই শোনা গেল দেশের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্নের গলায়।

ওই ঘটনার পরে এই প্রথম সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছেন তিনি। ব্রিটেনের একটি চ্যানেলে জেসিন্ডা বুঝিয়েছেন, অভিবাসনের মাত্রা বেড়েছে বলেই বর্ণবিদ্বেষ ক্রমশ বাড়ছে— এই ধারণা তিনি মানেন না। ‘দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদের’ ঢেউ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ওই ব্যক্তি (জঙ্গি) অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ঠিকই। তবে ওর মতো ধ্যানধারণা নিউজ়ল্যান্ডে আর কারও নেই, তা বলছি না। তবে সেটা ‘নিউজ়িল্যান্ডারদের’ স্বার্থবিরোধী।’’ জেসিন্ডা মনে করেন, প্রত্যেকেরই একটা দায়িত্ব আছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যেখানেই এই মতাদর্শ রয়েছে, তা নির্মূল করতে হবে। এবং এমন কোনও পরিবেশ তৈরি করা যাবে না, যেখানে এই ধরনের মতাদর্শ জোরালো হয়ে উঠতে পারে— সেটা কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে আমাদের।’’

আর এই সূত্রেই তিনি গোটা বিশ্বের সক্রিয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। জেসিন্ডা বলেছেন, ‘‘এটা নিয়ে সারা বিশ্বকেই ভাবতে হবে। অন্য কোথাও বড় হয়ে ওই বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়েছে একটি লোক। নিউজ়িল্যান্ডে হিংসা বয়ে নিয়ে এসেছে সে-ই। যদি সারা বিশ্বকে বোঝাতে চাই যে আমরা সহিষ্ণু এবং সকলকে নিয়ে বেঁচে থাকায় বিশ্বাস করি, তা হলে সীমান্তের বেড়া মাথায় রেখে ভাবা চলবে না।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নিউজ়িল্যান্ড যে বরাবরই শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে এসেছে, তা ফের মনে করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা সকলকে স্বাগত জানাই। বাইরে থেকে এসে যারা নিউজ়িল্যান্ডকে নিজের দেশ ভাবে, তাদের আপ্রাণ যত্ন করি। তবে তার জন্য এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে, আমরা এমন পরিবেশ তৈরিতে প্রশ্রয় দিই, যেখানে ওই ধরনের মতাদর্শ লালন করা হয়।’’ মসজিদ হামলার জঙ্গির নাম উচ্চারণ না করার সিদ্ধান্তের পক্ষে জেসিন্ডা আজও বলেন, ‘‘ওর লক্ষ্যই ছিল কুখ্যাত হওয়া। সেটা কিছুতেই হতে দেব না।’’

স্তব্ধ: প্রিয়জনদের বিদায় জানাতে সমাধিক্ষেত্রে এসেছে ১৩ বছরের জ়ায়েদ মুস্তাফা। চোখেমুখে যন্ত্রণার ছাপ। হাতেও আঘাত। গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে বাবা, খালিদ আর দাদা, হামজ়ার সঙ্গে প্রার্থনায় এসেছিল সে। সেই বাবা-দাদাকেই বুধবার অন্তিম শয়ানে শায়িত হতে দেখল জ়ায়েদ। নিউজ়িল্যান্ডে হামলার পরে তাঁদেরই প্রথম সমাহিত করা হল। তাঁদের জন্য প্রার্থনা করে জ়ায়েদ বলল, ‘‘তোমাদের সামনে আমার বসে থাকার কথা নয়। তোমাদের পাশে আমারও শায়িত হওয়া উচিত ছিল।’’ বুধবার ক্রাইস্টচার্চ মেমোরিয়াল পার্ক সমাধিক্ষেত্রে। ছবি: রয়টার্স।

‘‘নিউজ়িল্যান্ড যদি আগ্রহী না হয়, অস্ট্রেলীয় ঘাতককে শিক্ষা দেবে তুরস্ক’’— আগামী ৩১ মার্চ স্থানীয় নির্বাচনের আগে হাওয়া গরম করতে এক প্রচারসভায় সম্প্রতি বলেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়েপ এর্ডোয়ান। জেসিন্ডা এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁর বিদেশমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্সকে তুরস্কে পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আজ।

আপাতত দেশবাসীর মনের ক্ষত নিরাময়ে একাগ্র নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। তাই আগামী শুক্রবার নমাজের জাতীয় সম্প্রচার করতে চান তিনি। পালন করতে চান দু’মিনিটের নীরবতাও। এর আগেই তিনি জানান, শেষকৃত্যের কাজে অর্থসাহায্য করবে সরকার। কাল পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আগেও জেসিন্ডা প্রথম থেকেই বুঝিয়েছেন, তিনি কতটা সমব্যথী। ‘সালাম আলাইকুম’ বলে কথা শুরু করেন। পার্লামেন্টে এই প্রথম কোরানের অংশ পাঠ হয়েছে গত কাল।

আজ থেকে ক্রাইস্টচার্চের মেমোরিয়াল পার্কের সমাধিস্থলে শেষকৃত্য শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে নিউজ়িল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া বাবা-ছেলে খালেদ ও হামজ়া মুস্তাফার দেহ কবর দিয়ে শুরু হয় সেই কাজ। যার সাক্ষী ছিল হামজ়ার ১৩ বছরের ভাই জ়ায়েদ। দ্বিতীয় বারের জন্য ক্রাইস্টচার্চে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেন, ‘‘একটা পরিবার নিরাপত্তার জন্য এ দেশে এল। ওঁদের তো নিরাপদেই থাকার কথা ছিল। বোঝাতে পারব না, এই অনুভূতি কতটা যন্ত্রণাদায়ক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Zealand Jacinda Ardern Racism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE