Advertisement
E-Paper

আলোচনা ব্যর্থ, সঙ্কটে মের্কেল

পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে খুব শীঘ্রই জার্মানিতে ফের নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আর তা হলে হয়তো সরতে হতে পারে দীর্ঘ দু’যুগ ধরে দেশে কর্তৃত্ব চালিয়ে আসা মের্কেলকে। তিনি নিজে অবশ্য মুখে পরিস্থিতি সামলানোর কথা বলছেন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৫
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল।

দু’মাস ধরে চাপা উৎকণ্ঠা ছিল। এ বার তা আরও প্রকট হল।

কাল মাঝ রাতেই ভেস্তে গেল চার জোট সঙ্গীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা পর্ব। যার জেরে চরম রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল। সঙ্কটে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নও। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে খুব শীঘ্রই জার্মানিতে ফের নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আর তা হলে হয়তো সরতে হতে পারে দীর্ঘ দু’যুগ ধরে দেশে কর্তৃত্ব চালিয়ে আসা মের্কেলকে। তিনি নিজে অবশ্য মুখে পরিস্থিতি সামলানোর কথা বলছেন। কিন্তু ভোট তিনি কী ভাবে এড়াবেন, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে। একটি প্রথম সারির জার্মান পত্রিকা তো আবার দেশের এই সঙ্কটজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ব্রেক্সিট’ আর ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়’-এর সঙ্গেও তুলনা করে ফেলেছে। আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার খবর শুনে দাম পড়ছে ইউরোরও।

বিতর্কের সূত্রপাত বছর দু’য়েক আগে। বিশ্ব জুড়ে চলা শরণার্থী সঙ্কটের সময় প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার দশ লাখেরও বেশি শরণার্থীর জন্য দেশের দরজা খুলে দিয়েছিলেন মের্কেল। আর তার পর থেকেই কমতে থাকে তাঁর জনপ্রিয়তা। শরণার্থীর ছদ্মবেশে দেশে সন্ত্রাসবাদীরা ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ করতে থাকে বিরোধী দলগুলি। এর পর পরই ২০১৬ সালে মোট সাতটি জঙ্গি হামলায় দেশের নানা প্রান্তে মৃত্যু হয় বাইশ জনের। ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে সিরিয়া আর আফগানিস্তান থেকে আসা কিছু শরণার্থীও কয়েকটি হামলায় জড়িত বলে দাবি করে জার্মান পুলিশ। এর পর শুধু নিজের দেশে নয়, গোটা ইউরোপে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন মের্কেল।

এই অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের ডাক দেন মের্কেল। কিন্তু সেই ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাঁর দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)। মাত্র তেত্রিশ শতাংশ ভোট পাওয়া মের্কেল তখন চারটি দলের সঙ্গে জোট গড়ার কথা ভাবতে শুরু করেন। দু’মাস ধরে আলোচনার পরে এফডিপি নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার জানিয়ে দেন, এই জোটে থাকা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর সাফ কথা, ‘‘দেশের উন্নয়নে কোনও সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা দেখাতে পারেননি মের্কেল। রয়েছে বিশ্বাসের অভাবও।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন,‘‘খারাপ ভাবে সরকার চালানোর থেকে সরকার না চালানো অনেক ভাল।’’ জার্মান রাজনীতির অন্দরের খবর, আয়কর ছাড়, পরিবেশ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে সিডিইউ-র সঙ্গে মতবিরোধ হচ্ছিল বাকি দলগুলির।

লিন্ডনারের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে একবারের জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিধ্বস্ত মের্কেল। তিনি বলেছেন, ‘‘দেশকে সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কার্যনির্বাহী চ্যান্সেলর হিসেবে যা করার, আমি তা করব।’’ আজই প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমাইয়ারের সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর। ইতিমধ্যেই মের্কেলের ইস্তফা দাবি করেছে বিরোধীরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এত বড় রাজনৈতিক সঙ্কট আর দেখেনি জার্মানি। এই অবস্থায় মের্কেলের সামনে চারটি পথ খোলা আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রথমত, কোনও ভাবে লিন্ডনারকে রাজি করিয়ে তাঁকে ফের আলোচনায় টেনে আনা। দ্বিতীয়ত, এসপিডি নামে আর এক দলের সঙ্গে নতুন করে জোটের রাস্তায় হাঁটা। তৃতীয়ত, সংখ্যালঘু অবস্থাতেই সরকার চালানো। আর সব শেষে দ্রুত ফের ভোটের ব্যবস্থা করা। যদিও ভোট হলে মের্কেলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা যে খুবই ক্ষীণ, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের অনেকেই। আজ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র সঙ্গেও কথা হয়েছে মের্কেলের।

এই অবস্থায় কপালে চিন্তার ভাঁজ টেরেসা মে-রও। কারণ ব্রেক্সিটের উপরে এই সঙ্কটের প্রভাব পড়বে একশো শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার এই সময়টায় ব্রিটেনের সঙ্গে তাদের দর কষাকষি এখন চরমে। এই অবস্থায় মের্কেলই গোটা প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই দুর্বল হয়ে পড়লে ব্রেক্সিট আলোচনার জল কোথায় গড়াবে, তা-ও প্রশ্নের মুখে।

Angela Merkel আঙ্গেলা মের্কেল Brexit Coalition Talks Chancellor of Germany Political Crisis Germany
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy