Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Hunger Index

বিশ্ব জুড়ে না খেতে পেয়ে প্রতি ৪ সেকেন্ডে মৃত্যু এক জনের, খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন ৩৪.৫ কোটি মানুষ

সংগঠনগুলির পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩৪.৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে ৪৫টি দেশের আরও ৫ কোটি বাসিন্দা।

২০১৯ সালের পর খাদ্যসঙ্কটে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।

২০১৯ সালের পর খাদ্যসঙ্কটে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ফাইল ছবি

সংবাদ সংস্থা
রাষ্ট্রপুঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১০
Share: Save:

প্রতি চার সেকেন্ডে এক জন। স্রেফ না খেতে পেয়ে মৃত্যুর সংখ্যাটা দুনিয়া জুড়ে এখন এই রকম!

বিশ্ব উষ্ণায়ন, কর্মহীনতার ছায়ায় ঢাকা দুনিয়ার সামনে এমনই আতঙ্কের ছবি মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৭তম সাধারণ সভায় তুলে ধরলেন দু’শোরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা। একটি খোলা চিঠিতে ৭৫টি দেশের ২৩৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই সমস্যার প্রতিকারের জন্যে সব দেশকে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছে।

সংগঠনগুলির পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩৪.৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে ৪৫টি দেশের আরও ৫ কোটি বাসিন্দা। বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর খাদ্যসঙ্কটে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। একবিংশ শতকের তাবড় রাষ্ট্রনেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে এ বিশ্বকে আর দুর্ভিক্ষ দেখতে হবে না। সংগঠনগুলির ক্ষোভ, বাস্তবে তা হচ্ছে কোথায়? সোমালিয়া আজ দুর্ভিক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে।

বস্তুত, দুর্ভিক্ষের ছায়া সবচেয়ে বেশি গ্রাস করেছে আফ্রিকা মহাদেশকে। ইয়েমেনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা মোহানা আহমেদ আলি এলজাবালি এ দিন বলেছেন, ‘‘কোনও একটা দেশ বা একটা মহাদেশের সমস্যা নয় এটা। দুর্ভিক্ষ কোনও একটা কারণে হয় না। মানবতার প্রতি অবিচারই এর আসল কারণ। এক দল মানুষ যখন প্রাচুর্যের আয়োজনে মগ্ন, অন্য দলের কাছে প্রাণ বাঁচানোর মতো খাবারটুকুও নেই।’’ দেরি না করে সকলকে এগিয়ে আসার ডাক দিয়ে মোহানা বলেন, ‘‘অভুক্ত মানুষের পাশে যে যতটা পারেন, দাঁড়ান। খাবার দিয়ে প্রাণ বাঁচান।’’

সোমালিয়ার পাশাপাশি ইথিয়োপিয়া, নাইজিরিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশগুলিতেও লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মরণাপন্ন। ইথিয়োপিয়ার সীমান্তঘেঁষা সোমালি এলাকায় এক শরণার্থী শিবিরে চার সন্তানকে নিয়ে থাকেন সুমায়া। বত্রিশ বছরের সুমায়ার মুখে যেন আশি বছরের ক্লান্তির ছায়া। তিনি বলছিলেন, ‘‘খাবার নেই, জল নেই, অর্থহীন একটা জীবন। ছেলেমেয়েরা ঠিক করে খেতে পায় না। চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। এ বার খাবার না পেলে ওরা মরেই যাবে।’’

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সমস্যার শিকড়ে গেলে খাদ্যসঙ্কটের হাজারটা কারণ দেখা যাবে। দারিদ্র, সামাজিক অন্যায়, লিঙ্গবৈষম্য, কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং তার পাশাপাশি অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের মতো সাম্প্রতিক কারণগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রাস্ফীতির মতো অর্থনৈতিক কারণে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমশ বাড়ছে। ফলে সঙ্কটও বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, শুধু মাত্র অতিমারি পর্বেই বিশ্বে ধনকুবেরদের সম্পত্তি বেড়েছে লাফিয়ে। তার সঙ্গে বেড়েছে খাদ্যের সঙ্কটও। এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে ভারতের উদাহরণ। চলতি বছরেই বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় দু’নম্বরে উঠে এসেছে আদানি গোষ্ঠী। অম্বানী গোষ্ঠী রয়েছে প্রথম দশের মধ্যে। আর এই দেশই ২০২১ সালে বিশ্বের ক্ষুধাসূচকের তালিকায় ১১৬টি দেশের মধ্যে ছিল ১০১ নম্বরে! ২০১৪ সালে এই তালিকায় ভারত ছিল ৫৫ নম্বরে। অর্থাৎ মাত্র আট বছরে দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে হুহু করে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, সামাজিক অসাম্য, সম্পদের অসম বণ্টন, সরকারি নীতির ব্যর্থতাই ভারতে না খেতে পাওয়া মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির আসল কারণ। গোটা দুনিয়ার ছবিটা তার থেকে আলাদা নয়। দুর্ভিক্ষ এড়াতে চাইলে অবিলম্বে সব দেশের এখনই একজোট হয়ে এগিয়ে আসা দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hunger Index United Nation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE