দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তানের উপর সবচেয়ে কম পারস্পরিক শুল্ক চাপাল আমেরিকা। গত ২ এপ্রিলের ঘোষণায় পাকিস্তানের পণ্যে ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বৃহস্পতিবার নয়া শুল্কহার সংবলিত যে নির্দেশনামায় তিনি স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে পাকিস্তানের উপর প্রযুক্ত পারস্পরিক শুল্কের হার কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে।
বুধবারই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ‘বন্ধু’ ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, তাইল্যান্ডের পণ্যে ১৯ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করছে আমেরিকা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, ভিয়েতনামের উপর প্রযুক্ত হচ্ছে ২০ শতাংশ শুল্ক। সেই হিসাবে ভারতীয় উপমহাদেশে তো বটেই গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম শুল্ক দিতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। অবশ্য চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বৈঠকের পর সে দেশের পণ্যে আমেরিকা কত শতাংশ শুল্ক চাপাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নয়া শুল্কহার ঘোষিত হওয়ার পরেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ লেখেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।” বুধবার ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলার কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তিনি জানান যে, পাকিস্তানে যে বিশাল তৈলভান্ডার রয়েছে, তার উন্নতির জন্য ওয়াশিংটন এবং ইসলামাবাদ যৌথ ভাবে কাজ করবে। পাকিস্তান কোনও এক দিন ভারতকেও তেল বিক্রি করতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন ট্রাম্প। ওই পোস্টেই ট্রাম্প জানান, দুই দেশের এই বোঝাপড়ায় কোন তেল উত্তোলনকারী সংস্থা নেতৃত্ব দেবে, তা তাঁর প্রশাসন ঠিক করবে। তবে পাকিস্তানে বিশাল তৈলভান্ডার রয়েছে বলে ট্রাম্প যে দাবি করেছেন, তার কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি।
পাকিস্তান অবশ্য বিষয়টিকে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ‘মসৃণ’ করার উপায় হিসাবেই দেখছে। সে দেশের অর্থ মন্ত্রকের তরফে বৃহস্পতিবার রাতে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “এই চুক্তি শক্তি, খনিজ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে (আমেরিকার সঙ্গে) অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা হল।” মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে উৎপাদিত রেডিমেড পোশাকের অন্যতম বড় বাজার আমেরিকা। এত দিন পাকিস্তানকে এই বিষয়ে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলত পড়শি ভারত এবং বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তানের উপর আরোপিত মার্কিন শুল্কের পরিমাণ কম হওয়ায় এ বার প্রতিযোগিতায় তারাই এগিয়ে থাকবে বলে আশা ইসলামাবাদের। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই বিদেশি ডিজিটাল পরিষেবার উপর প্রযুক্ত ৫ শতাংশ কর প্রত্যাহার করার কথা জানায় পাকিস্তান। অনেকেই মনে করছেন, এই কর প্রত্যাহার করে আদতে ওয়াশিংটনকে বার্তা দিয়েছিল পাকিস্তান। তার পরেই পাকিস্তানের উপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানায় হোয়াইট হাউস।