Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বড়সড় হামলার আশঙ্কা, হঠাৎ গোয়াদরকে নিশ্ছিদ্র দুর্গ বানালো পাক সেনা

পকিস্তানের গোয়াদরে তৈরি হওয়া চিনা বন্দরে হঠাৎ নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করল পাক সেনা। বিপুল চিনা বিনিয়োগে তৈরি গোয়াদর বন্দর এবং চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে বড়সড় জঙ্গি হামলা হতে পারে। আশঙ্কা পাক গোয়েন্দাদের। সেক্ষেত্রে বেজিং-এর কাছেও মুখ পুড়বে ইসলামাবাদের।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:২৪
Share: Save:

পকিস্তানের গোয়াদরে তৈরি হওয়া চিনা বন্দরে হঠাৎ নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করল পাক সেনা। বিপুল চিনা বিনিয়োগে তৈরি গোয়াদর বন্দর এবং চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে বড়সড় জঙ্গি হামলা হতে পারে। আশঙ্কা করছেন পাক গোয়েন্দারা। তেমন কিছু ঘটে গেলে শেষ আশ্রয় বেজিং-এর কাছেও মুখ পুড়বে ইসলামাবাদের। তাই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের বন্দর শহর গোয়াদরকে রাতারাতি দুর্ভেদ্য দুর্গ বানানোর চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে শুধু বন্দর শহরে নয়, চিনের কাশগড় থেকে পাকিস্তানের গোয়াদর পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের যে কোনও অংশে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে খবর। ইসলামাবাদের নিয়ন্ত্রণের প্রায় বাইরে থাকা বালুচিস্তানের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এই করিডর। সেখানে করিডরের নিরাপত্তা আদৌ নিশ্চিত কি না, বলতে পারছে না পাক সেনাও।

কাশগড় থেকে গোয়াদর পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর এবং গোয়াদরে বিশাল বন্দর তৈরি করতে চিন ৪৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ইসলামাবাদ মনে করছে, দুই দেশের এই অর্থনৈতিক করিডর পাকিস্তানের বেহাল আর্থিক অবস্থার ছবিটাই বদলে দেবে। প্রচুর কর্মসংস্থানও হবে। চিনা বিনিয়োগে তৈরি এই করিডর এবং বন্দরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যে বিপুল বন্দোবস্ত করেছে, তা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে খুব বড়সড় হামলার আশঙ্কায় রয়েছে পাকিস্তান।

দিন কয়েক আগে চিনা প্রতিনিধিদের নিয়ে অর্থনৈতিক করিডরের সড়ক ধরে গোয়াদরের দিকে যাওয়া একটি কনভয় পাকিস্তান জুড়ে জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর একাধিক ছোট-বড় গাড়ি ঘিরে রেখেছিন চিনা প্রতিনিধিদের এসইউভি-কে। গোটা রাস্তায় বিপুল সংখ্যায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। রাস্তা ফাঁকা রাখতে গোটা যাত্রাপথে সব মোড় পুলিশ আটকে দিয়েছিল। চিন থেকে ঠিক কারা গিয়েছিলেন পাকিস্তানে, তা স্পষ্ট নয়। তবে বেজিং-এর খুব হাই-প্রোফাইল প্রতিনিধিরাই যে ওই এসইউভি-তে ছিলেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

ইরানের খুব কাছাকাছি আরব সাগরের তীরে গড়ে তোলা বন্দর শহর গোয়াদরের জনসংখ্যা খুব বেশি হলে এক লক্ষ। সেই শহরের নিরাপত্তার জন্য ৫০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক জানিয়েছে, ৭০০-৮০০ জনের একটি পুলিশ বাহিনী নিয়োগ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যে বাহিনী শুধু এই করিডরের নিরাপত্তার জন্যই গঠিত হবে। গোয়াদরে বসবাসকারী এবং এই করিডরে কর্মরত চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এই সম্পূর্ণ নতুন সিকিওরিটি ইউনিট খুলছে পাকিস্তান। পরে এই ইউনিটকে স্বশাসিত সিকিওরিটি ডিভিশন করে তোলার পরিকল্পনাও পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের রয়েছে।

আরও পড়ুন:

করিডর উড়িয়ে দেবে ভারত, ভয়ে কাঁটা চিন-পাকিস্তান

নিরাপত্তা বহুগুণ বাড়িয়েও কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে পারছে না ইসলামাবাদ। গোটা দেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের যে রকম বাড়বাড়ন্ত, তাতে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে যে কোনও শিবির থেকে যে কোনও দিন হামলার চেষ্টা হতে পারে। তেহরিক-ই-তালিবান, আইএস বা আল কায়েদার হামলার আশঙ্কা রয়েছে। ইসলামাবাদ সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে বালুচ বিদ্রোহীদের। আফগানিস্তান আর ইরানের সীমান্ত লাগোয়া মরুপ্রদেশ বালুচিস্তানের উপজাতি পাকিস্তানের শাসন মানে না। তারা স্বাধীন বালুচিস্তানের দাবিতে লড়ছে। বালুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা মিরান বালুচ সম্প্রতি হুমকি দিয়েছেন, ‘‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরকে আমরা বালুচিস্তানে দখলদারি চালানোর চেষ্টা বলেই মনে করছি।’’ এই প্রকল্পে যে কাজ করবেন, সেই বালুচ উপজাতির শত্রু এবং তার উপরেই হামলা হবে, হুঁশিয়ারি মিরানের।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ অবশ্য হামলার রুখে দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছেন, এখন নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু বালুচিস্তানের মানুষ যখন বুঝতে পারবেন যে এই প্রকল্প তাঁদের জন্যই লাভজনক, তখন আর করিডরকে নিরাপত্তা দেওয়ার দরকারই হবে না।

বিশাল বালুচিস্তান প্রদেশের জনবিরল এলাকার মধ্যে দিয়ে মাইলের পর মাইল ছুটছে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। পাক সরকার মুখে বলছে, করিডরের নিরাপত্তায় কোনও কামতি থাকবে না। কিন্তু এমন বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরে অর্থনৈতিক করিডরকে বালুচ বিদ্রোহীদের হামলা থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া কী করে সম্ভব, তা এখনও ভেবে উঠতে পারেনি ইসলামাবাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE