নিজের দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়েই পহেলগামে হামলা চালানো জঙ্গি গোষ্ঠী ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স’ ফ্রন্ট (টিআরএফ)-কে আড়াল করলেন পাক বিদেশমন্ত্রী ইশক দার। তিনি দাবি করলেন, অস্থায়ী সদস্য পাকিস্তানের তোলা আপত্তির জেরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ বৈসরনের হামলার নিন্দা করে দেওয়া তাদের বিবৃতির ভাষা পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিল। ওই বিবৃতিতে প্রথমে টিআরএফের নাম থাকলেও পাকিস্তানের আপত্তিতে তা বাদ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, ‘পহেলগাম’ পাল্টে বিবৃতিতে ‘জম্মু ও কাশ্মীর’ লেখার নেপথ্যেও ছিল ইসলামাবাদের চাপ।
পহেলগামের অদূরে বৈসরনে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার পরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছিলেন, আমেরিকা ও ব্রিটেন-সহ পশ্চিমি দেশগুলি পাকিস্তানকে দিয়ে ‘নোংরা কাজ’ করাত। এ বার পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতো সে দেশের বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্যও ভারতের হাতে অস্ত্র তুলে দিল বলে অনেকে মনে করছেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের পরে লস্করের ছায়া সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে টিআরএফ। কিন্তু পাক বিদেশমন্ত্রীর মতে, সেটি কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীই নয়, একটি মঞ্চ মাত্র। টিআরএফ বৈসরনের হামলার দায় নিয়েছে বলে যে খবর সম্প্রচারিত হচ্ছে, তা-ও ‘সর্বৈব মিথ্যা’। ‘বেছে বেছে’ টিআরএফ-কে দায়ী করতে হলে প্রমাণ দেওয়া জরুরি।
পহেলগামের হামলার পরে নিরাপত্তা পরিষদ বলেছিল, ‘জম্মু ও কাশ্মীরে’ হওয়া হামলার তারা তীব্র নিন্দা করছে। হামলা যারা চালিয়েছে, তাতে আর্থিক মদত দিয়েছে, সকলকেই কাঠগড়ায় তোলার দাবি জানিয়েছিল তারা। দার বলেন, ‘‘আমার দু’টি বিষয়ে আপত্তি ছিল। প্রথমত, ওখানে শুধু পহেলগামের কথা বলা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফোরামের (এই নামই বলেন মন্ত্রী) ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়েছিল। আমি মনে করেছিলাম, এটা মেনে নেওয়া যায় না। শুধু পহেলগাম নয়, ‘জম্মু ও কাশ্মীর’ লিখতে হবে।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি প্রকাশের আগে সব সদস্যের ঐকমত্য জরুরি। দারের দাবি, বিবৃতির প্রাথমিক খসড়া নিয়ে পাকিস্তান বেঁকে বসায় মূলত আমেরিকার সঙ্গে তাদের টানাপড়েন শুরু হয়। পাক বিদেশমন্ত্রীর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জে আমাদের দূতকে পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছিলাম, (বিবৃতিতে) বদলগুলো যাতে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বড় বড় জায়গা থেকে ফোন এসেছে। বলে দিয়েছি, কিচ্ছু করার নেই।’’ দারের দাবি, তাঁরা অনড় থাকায় বিবৃতি চূড়ান্ত করতে আড়াই দিন লেগে যায়। পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায় চিন। শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদের আপত্তিকে মান্যতা দিয়েই প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের পরে বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদ সংস্থা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)