পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশে একটি তামার খনিতে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ওই খনি থেকে তামা উত্তোলন শুরু হলে সেটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম তামার খনি হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু এই সংস্কারের কাজ চালানোর জন্য আমেরিকার ‘এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাঙ্ক’-এর কাছে ১০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৮০ কোটি টাকারও বেশি) ঋণ হিসাবে চেয়েছে পাকিস্তানের সংস্থা ‘রেকো ডিক কপার অ্যান্ড গোল্ড মাইন’।
সম্প্রতি আমেরিকার ওই ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের ওই সংস্থা ১০ কোটি ডলারের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং আর্থিক নিরাপত্তার জন্য আর্জি জানিয়েছে। যদিও ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদ বৈঠকে বসে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আদৌ ওই সংস্থাকে ঋণ দেওয়া হবে কিনা, তা ২৬ দিনে স্থির করা হবে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই সংস্থাটিতে সিংহভাগ (৫০ শতাংশ) অংশীদারি রয়েছে কানাডার সংস্থা ‘ব্যারিক গোল্ড কর্পোরেশন’-এর। ২৫ শতাংশ অংশীদারি রয়েছেন বালোচিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের। আর বাক়ি ২৫ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে পাকিস্তান সরকারের। ইতিমধ্যে ওই সংস্থা এর এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি) এবং বিশ্বব্যাঙ্কের থেকে ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পেয়েছে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা)। আমেরিকার ব্যাঙ্কটির কাছ থেকে ঋণ পেলে ওই টাকা খনিটির উন্নয়নে, যথা সোলার প্যানেল, খনিতে নামার উপযোগী ট্রাক কিনতে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। খনির উন্নয়নে পরামর্শদান এবং মালপত্র আনার জন্য ইতিমধ্যেই আমেরিকার পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছে পাকিস্তানের সংস্থাটি।
আরও পড়ুন:
অনেকেই মনে করছেন, এই খনির দিকে নজর রয়েছে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের। কারণ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ-সহ একাধিক ক্ষেত্রে তামা গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ওই খনি থেকে উত্তোলিত তামায় আমেরিকা ভাগ বসাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই গোটা বিশ্বে শোধিত তামার চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাহিদা মেটাতে সম্প্রতি আমেরিকার অ্যারিজ়োনায় একটি তামা উত্তোলন প্রকল্প শুরু হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের নির্দেশে তা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়। তার পরেই বিচারককে তোপ দেগে ট্রাম্প বলেছিলেন, “উনি অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির প্রতিনিধি।”
প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানের ওই খনি থেকে বছরে প্রায় ৮০ হাজার টন তামা উত্তোলন করা যাবে। ভারতে ২০২৫ সালে মাত্র ৩০ হাজার টন তামা উত্তোলন করা হয়েছে। তা ছাড়া ভৌগোলিক অবস্থানের নিরিখেও খনিটি গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও সেখানে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা রয়েছে। প্রায়ই বালোচ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় পাক সেনা। সেই প্রদেশে এই বৃহৎ কয়লা খনি শান্তিপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের ‘বিশালাকার তৈলভান্ডার’ নিয়ে যৌথ ভাবে কাজ করার বার্তা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে আদৌ পাকিস্তানে এমন তৈলভান্ডার রয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতিতে ভাগ্য ফেরানোর জন্য তৈলভান্ডার খুঁজে বার করে তা উত্তোলনের স্বপ্ন দেখে আসছে পাকিস্তান। কিন্তু কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি। বর্তমানের পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি যা আমদানি করে, তা হল পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য। পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ জ্বালানিই বিদেশ থেকে আসে। জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও বৃদ্ধি পায়।