Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ভালবাসার টানে পাঁচ হাজার মাইল সাঁতরে ফেরে ডিনডিম

নিস্তেজ অবস্থায় পাথরের খাঁজে পড়ে ছিল ডিনডিম। বাঁচার আশা ছিল না। চোখে পড়েছিল রিও ডি জেনেইরোর বাসিন্দা ৭১ বছরের জোয়াও পেরিরা ডি’সুজার। তাঁর শুশ্রূষা পেয়েই কোনও মতে প্রাণ বাঁচে ডিনডিমের। তার পর ডি’সুজার বাড়িতে প্রায় এগারো মাস থেকে ফিরে গিয়েছিল ডিনডিম। তবে ডি’সুজার মতো বন্ধুকে ভুলতে পারেনি সে। আর তাই প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে প্রতি বছর ৫০০০ মাইল সাঁতরে রিও ডি জেনেইরোয় ফেরে ডিনডিম।

আদর। পেরিরা ডি’সুজার সঙ্গে ডিনডিম।

আদর। পেরিরা ডি’সুজার সঙ্গে ডিনডিম।

সংবাদ সংস্থা
রিও ডি জেনেইরো শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৭
Share: Save:

নিস্তেজ অবস্থায় পাথরের খাঁজে পড়ে ছিল ডিনডিম। বাঁচার আশা ছিল না। চোখে পড়েছিল রিও ডি জেনেইরোর বাসিন্দা ৭১ বছরের জোয়াও পেরিরা ডি’সুজার। তাঁর শুশ্রূষা পেয়েই কোনও মতে প্রাণ বাঁচে ডিনডিমের। তার পর ডি’সুজার বাড়িতে প্রায় এগারো মাস থেকে ফিরে গিয়েছিল ডিনডিম। তবে ডি’সুজার মতো বন্ধুকে ভুলতে পারেনি সে। আর তাই প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে প্রতি বছর ৫০০০ মাইল সাঁতরে রিও ডি জেনেইরোয় ফেরে ডিনডিম।

ডিনডিম দক্ষিণ আমেরিকার একটি ম্যাজেলানীয় পেঙ্গুইন। প্রতি শীতেই আটলান্টিক উপকূল থেকে প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার মাইল সাঁতরে ব্রাজিলের উপকূলে এসে ভেড়ে এই পেঙ্গুইনরা। উড়তে না পারলেও দারুন ভালো সাঁতার কাটতে জানে এরা। এতটা পথ পেরিয়ে এসে অনেক পেঙ্গুইনই ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সময়টা ২০১১। রিও ডি জেনেইরোর একটি গ্রামে থাকেন জোয়াও পেরিরা ডি’সুজা। পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর মাছ ধরেই সময় কাটান। জুন মাসে এমনই এক দিন মাছ ধরতে গিয়ে পাথরের খাঁজে পড়ে থাকতে দেখেন একটি ম্যাজেলানীয় পেঙ্গুইনকে। দুর্বল, সারা শরীর তেলে চুপচুপ করছে, গায়ের পালক উঠে গিয়েছে। দেখে মায়া হয় তাঁর। তুলে নিয়ে আসেন নিজের বাড়িতে। শুরু হয় শুশ্রূষা। প্রায় এগারো মাস ডি’সুজার কাছেই থেকে যায় ছোট্ট পেঙ্গুইনটি।

ডি’সুজা আদর করে নাম রেখেছিলেন ডিনডিম। কালো পিঠ আর সাদা বুকের এই পেঙ্গুইনটার সঙ্গে দিব্যি জমে গিয়েছিল তাঁর। অন্য কেউ নয়, স্নান করানো থেকে ডিনডিমের জন্য মাছের ‘স্পেশাল ডিশ’, সবই নিজের হাতে সামলাতেন ডি’সুজা। এমন কী ডি’সুজার কোল ছাড়া ঘুমই আসত না ডিনডিমের।

আদরে যত্নে ক্রমশ চেহারা ফিরছিল ডিনডিমের। ফিরে এসেছিল গায়ের সমস্ত পালকও। সুস্থ হয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ফিরে যায় ডিনডিম। তবে দেশে ফিরেও ডি’সুজাকে ভোলেনি সে। তাই এই চার বছরে প্রতি বার সে রিও ডি জেনেইরোয় ফিরে এসেছে ডি’সুজার সঙ্গে দেখা করতে। শুধু আসেইনি, আট মাস করে থেকেও গিয়েছে তাঁর কাছে। ডি’সুজার কথায়, ‘‘আমি কখনও ভাবিনি ও ফিরে আসতে পারে। সবাই বলেছিল ও আর কখনও আসবে না। কিন্তু গত চার বছরে প্রতি বার এসেছে ডিনডিম।’’

সম্প্রতি ডি’সুজা ও ডিনডিমের এমনই এক মিষ্টি সম্পর্কের ছবি উঠে এসেছে ভিডিওয়। আর সেই ভিডিও দেখে অবাক সবাই। বিজ্ঞানী জোয়াও পাওলো ক্রাজেওস্কি জানাচ্ছেন, এমনটা আগে কখনও ঘটেনি। তাঁর কথায়, ডি’সুজাকেও হয়তো তার মতো পেঙ্গুইনই মনে করছে ডিনডিম, যার জন্য এই সহজ আদানপ্রদান সম্ভব হয়েছে।

প্রতি বার রিও ডি জেনেইরোয় ফিরে ডি’সুজাকে দেখেই আনন্দে দৌড়ে আসে ডিনডিম। ঠিক যেন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা। জোয়ানের কথায়, ‘‘আমি ওকে নিজের সন্তানের মতোই ভালবেসেছি, ডিনডিমও সেই ভালবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

penguin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy